বাংলাদেশের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন ও রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলো যেমন আইনবিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় (Balance of Power) রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে কিছু প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
আজ রোববার (৬ অক্টোবর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে উক্ত আবেদন প্রেরণ করেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান।
আবেদনে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট সম্পর্কে আলোচনা ও প্রতিকারের প্রস্তাবনা দেওয়া হওয়া হয়েছে। এছাড়া শাসন বিভাগ কর্তৃক সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোকপাত বলা হয়েছে।
আবেদনে যা বলা হয়েছে তা নিম্নরূপ –
বর্তমান ২০২৪ সালের জুলাই-আগষ্ট গণবিপ্লবে দেশের হাজার হাজার ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে এবং অগনিত মানুষ আহত হয়েছে। দেশের মানুষ শুধুমাত্র স্বৈরাচারী দানবীয় আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি, পাশাপাশি দেশের মানুষ রাষ্ট্রীয় সিস্টেম সংস্কারের জন্যও যুদ্ধ করেছে যেই সিস্টেম সরকারকে দানবীয় করে তুলে। আর রাষ্ট্রের মৌলিক আইন হলো সংবিধান।
তাই এই সংবিধানের যথাযথ সংস্কার না করে তাড়াহুড়ো করে যদি আবার নির্বাচন দেওয়ার হয় তাহলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকারও আবার দানবীয় সরকারে পরিণত হবে। সেক্ষেত্রে দেশের মানুষদের কে আবারও গণআন্দোলন করতে হবে এবং আবারও জীবন দিতে হবে। তাই বর্তমান এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে একটু সময় নিয়ে হলেও একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় সংস্কার করে যেতে হবে।
যেকোন সমস্যা সমাধানের আগে সর্বপ্রথম সমস্যার গোড়ায় যেতে হবে। আমাদের কে সর্বপ্রথম বুঝতে হবে কেন আমাদের দেশের সরকারগুলো দানবীয়, স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠে ? আমরা জানি একটি রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভ হলো তিনটি যথা আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। এই তিনটি স্তম্ভের ভিতরে যদি ক্ষমতার ভারসাম্য (Balance of Power) থাকে তাহলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলবে। কিন্তু কোনভাবে যদি এই স্তম্ভগুলোর মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠে তাহলে রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে এবং সরকার স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে ।
এখন আমরা বুঝার চেষ্টা করবো কিভাবে আমাদের রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলোর মধ্যে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে এবং ক্ষমতার ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। আমাদের রাষ্ট্রীয় স্তম্ভগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে। আমাদের বর্তমান সরকার ব্যবস্থা অনুযায়ী শাসন বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা যেমন প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীরা মুলত আইন বিভাগের সদস্য।
এসব কারনে আইন বিভাগ বা পার্লামেন্টের উপর শাসন বিভাগের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শক্তিশালী প্রভাব থাকে । অপরদিকে ফ্লোর ক্রসিং বিধানের কারণে কোন সংসদ সদস্য তার দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারে না । ফলে কার্যত আইন বিভাগ পুরোপুরিভাবে শাসন বিভাগের কর্তাব্যক্তি তথা প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
এক্ষেত্রে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে কোন ক্ষমতার ভারসাম্য (Balance of Power) থাকে না। এই আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকার কারণে কার্যত আইন বিভাগের সংসদ সদস্যরা শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার্থে সংসদে আসেন।
এছাড়া ক্ষমতার ভারসাম্য না থাকার কারনে শাসন বিভাগের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং আইন বিভাগের সংসদ সদস্যদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠে এবং সকল সরকারী প্রজেক্টে তারা মিলেমিশে দূর্নীতি ও অনিয়ম করেন।
এবার আলোকপাত করবো, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যগত সমস্যা নিয়ে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী দেশের সর্বোচ্চ আদালত হলো সুপ্রিম কোর্ট । এই সুপ্রিম কোর্টের দুইটি বিভাগ যেমন হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ। এই শাসন বিভাগ (Executive) যদি সুপ্রিম কোর্টের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে তাহলে সারা বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বাংলাদেশে সকল রাজনৈতিক সরকারগুলো অতীতে দুইটি প্রধান উপায়ে সুপ্রিম কোর্টের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রথমত, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের কোন নীতিমালা নেই। মূলত সরকারের পরামর্শ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ করে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকগণ মূলত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্য থেকে নিয়োগ পেয়ে থাকেন এবং কিছু বিচারক নিম্ন আদালতের জেলা ও দায়রা জজদের মধ্য থেকে নিয়োগ পেয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক সরকারগুলো সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার দলীয় আস্থাভাজন লোকজনদের নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করে থাকেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের সরকারী আইনজীবী যেমন এটর্ণী জেনারেল, অতিরিক্ত এটর্ণী জেনারেল, সহকারী এটর্ণী জেনারেল নিয়োগের কোন নীতিমালা নেই।
সকল রাজনৈতিক সরকারগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মী আইনজীবীদের মধ্য থেকে এটর্ণী জেনারেল, অতিরিক্ত এটর্ণী জেনারেল, সহকারী এটর্ণী জেনারেল নিয়োগ দেন। ফলশ্রুতিতে আমাদের সুপ্রিম কোর্টে সরকারের অঘোষিত নিয়ন্ত্রণ থাকে।
এসব কারণে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্তম্ভগুলো যেমন আইনবিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে কোন ক্ষমতার ভারসাম্য নেই । সকল ক্ষেত্রে শাসন বিভাগের একক কর্তৃত্ব চলে । ফলশ্রুতিতে শাসন বিভাগের কর্তাব্যক্তি তথা প্রধানমন্ত্রী নিজেকে দেশের মালিক বা সর্বসেবা মনে করে থাকেন।
এমতাবস্থায় ২০২৪ এর জুলাই-আগষ্ট এর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি রাষ্ট্রের মূল স্তম্ভগুলোর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য (Balance of Power) প্রতিষ্ঠা না করে যান, তাহলে মূলত দেশের কোন সংস্কারই হবে না । ভবিষ্যত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এসব সংস্কার ফেলে রাখা যাবে না কারণ রাজনৈতিক সরকার তাদের নিজেদের স্বার্থে কখনোই এসব সংস্কার করবে না ।
এখন কিভাবে আমরা রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলো যেমন আইনবিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি সেটা আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে । আমাদের রাষ্ট্রের স্তম্ভগুলোর মধ্যে এমনভাবে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে যাতে এসব স্তম্ভগুলো একে অপরের সাথে কোনভাবেই সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে না পারে ।
প্রথমত, আইন বিভাগের (Legislature) সাথে শাসন বিভাগের (Executive) সিন্ডিকেট বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশে দুইটি নির্বাচন হবে। প্রথমটি হবে আইন বিভাগের বা পার্লামেন্টের নির্বাচন। পার্লামেন্টের সদস্যরা ৩ থেকে ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন। অপরদিকে দেশে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পদে আলাদা নির্বাচন হবে।
প্রত্যেক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য একজন রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নমিনেশন দিতে পারবেন। এছাড়া অন্তত পঞ্চাশ হাজার ভোটারের সমর্থনে কোন ব্যাক্তি স্বতন্ত্রভাবে রাষ্ট্রপতি বা উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন । এই রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের সদস্য হতে পারবেন না।
অপরদিকে পার্লামেন্টের কোন সদস্য রাষ্ট্র ও উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না । এছাড়া সংসদ সদস্যদের ৩/৪ তিন চর্তুংথাংশ ভোটে রাষ্ট্রপতির বা উপরাষ্ট্রপতির বা উভয়ের অভিসংশন (Impeachment) করা যাবে। অপরদিকে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিতে পারবেন। এভাবে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় থাকবে।
দেশে কোন প্রধানমন্ত্রী পদ থাকবে না। দেশ রাষ্ট্রপতি শাসনে চলবে। রাষ্ট্রপতি তার পছন্দমতো যোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়ে মন্ত্রীসভা গঠন করবেন। মন্ত্রীসভার কোন সদস্য আইন সভার সদস্য হতে পারবেন না। তবে রাষ্ট্রপতি যদি সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে কাউকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিতে চান তবে তার সংসদ সদস্য পদ বিলুপ্ত হবে। এছাড়া পার্লামেন্টের সদস্যরা ও শাসন বিভাগের রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা দুইবারের বেশি একই পদে থাকতে পারবেন না।
উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়া আইন বিভাগের বা পার্লামেন্টের অন্যতম আরেকটি সমস্যা হলো অযোগ্য, অশিক্ষিত, অদক্ষ ব্যক্তিগণ সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়া। সংসদ সদস্যরা আইন প্রণেতা হিসেবে গণ্য হলেও অধিকাংশ সংসদ সদস্যদের আইন কানুন সম্পর্কে নূন্যতম কোন ধারনাই নেই । মূলত আঞ্চলিক প্রভাব, অর্থ ও প্রতিপত্তির জোরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
যাই হোক, এসব সমস্যা এড়াতে সংসদে ১০০ (একশত) টি সংরক্ষিত আসন থাকতে হবে। এদের মধ্য ১০ জন হবেন সামরিক বাহিনীর মনোনীত সাবেক সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, ১০ জন হবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোনীত সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সদস্য, ১০ জন হবেন ব্যাবসায়ীদের মনোনীত সদস্য, ১০ জন হবেন ইসলাম ধর্মীয় আলেম, ১০ জন হবেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মনোনীত সদস্য, ১০ জন হবেন বিজ্ঞানী, ১০ জন হবে বিচারক ও আইনজীবীদের মনোনীত সদস্য, ৫ জন হবেন চিকিৎসকদের মনোনীত সদস্য, ৫ জন হবেন গণমাধ্যমের কর্মীদের মনোনীত সদস্য, ৫ জন হবেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অঞ্চলের মনোনীত সদস্য, ১ জন হবেন চলচ্চিত্র ও মিডিয়া কর্মীদের মনোনীত সদস্য, ১ জন হবেন ছাত্রদের মনোনীত সদস্য, ১ জন হবেন হিজরা সম্প্রদায়ের মনোনীত সদস্য, ১ জন হবেন শ্রমিক সদস্য, এছাড়া বাকি সদস্যরা মনোনীত হবেন রাষ্ট্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণী বা পেশার মানুষের মধ্য থেকে।
এক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক সুপারিশকৃত ব্যাক্তিদের তালিকা তৈরি করে নির্বাচন কমিশন যাচাই বাছাই করবেন । তারপর উক্ত তালিকা যাচাই-বাছাই করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রেরণ করবেন।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে যাচাই-বাছাই করে সংরক্ষিত সংসদ সদস্যদের চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করবেন। সংরক্ষিত সংসদ সদস্যরা নির্বাচিত সংসদ সদস্যের ন্যায় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন তবে তাদের কোন সংসদীয় অঞ্চল থাকবে না।
এবার আলোকপাত করবো, বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে। বিচার বিভাগের সংস্কার বলতে সুপ্রিম কোর্টের আমূল সংস্কার করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট সঠিকভাবে পরিচালিত হলে সারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ঠিক থাকবে। সুপ্রিম কোর্টের সর্বপ্রথম সংস্কার হলো রাজনৈতিক পছন্দে বিচারক নিয়োগ দেওয়া যাবে না । এক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত পরীক্ষার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।
মোট ৩০০ নাম্বারের তিনটি পরীক্ষা হবে, যেমন (১) সুপ্রিম কোর্ট রায় লেখা, অর্ডার লেখা, আইনের অ্যানালাইটিক্যাল বিষয় (২) বাংলাদেশের প্রচলিত আইন, আইনের দেশী বিদেশী রেফারেন্স সংক্রান্ত বিষয়াদি (৩) বাংলা ভাষা, ইংরেজি ভাষা, উপমহাদেশের আইনের ইতিহাস, দেশ বিদেশের সাম্প্রতিক বিষয়াদি। প্রতিটি পরীক্ষার সময় হবে ৫ ঘন্টা। দ্রুততম সময়ে যেকোন শুক্রবার ও শনিবার এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সুপ্রিম কোর্টের অন্তত ১৫ (পনের বছর) প্র্যাকটিসিং কোন আইনজীবী যার অন্তত ৫০০ (পাঁচশত) শত মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা আছে তিনি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এছাড়া জেলা জজ বা দায়রা জজ বা সম মর্যাদার কোন বিচারক যিনি তার টোটাল সার্ভিস লাইফে অন্তত ৩০০ (তিনশত) মামলার চুড়ান্ত রায় দিয়েছেন তিনি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
উক্ত লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ভাইয়া নেওয়া হবে। পুরো পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন। অতঃপর চুড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিবেন।
এ প্রক্রিয়ায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক নিয়োগ করলে একদিকে যেমন যোগ্য বিচারক পাওয়া যাবে, অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টে শাসন বিভাগের অযাচিত হস্তক্ষেপ কমে যাবে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের এটর্ণী জেনারেল, অতিরিক্ত এটর্ণী জেনারেল, সহকারী এটর্ণী জেনারেল এবং নিম্ন আদালতের সকল সরকারী আইনজীবীর নিয়োগ নির্ধারিত পরীক্ষায় মাধ্যমে নিতে হবে । সুপ্রিম কোর্টসহ নিম্ন আদালতের সকল সরকারী আইনজীবীদের মেয়াদ থাকবে পাঁচ বছর।
তবে পাঁচ বছর পর সরকার চাইলে আরও পাঁচ বছরের জন্য সরকারী আইনজীবীদের মেয়াদ বাড়াতে পারবে । তবে দশ বছরের বেশি কেউ সরকারী আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালত গুলোর স্টাফ বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে নিয়োগ করতে হবে কারণ এসব স্টাফ নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের কোন বিচারকের অপসারণ করতে হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে করতে হবে ।
যদিও বর্তমান সরকার সংবিধান সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করেছে তথাপি একজন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি উল্লেখিত বিষয়গুলো বর্তমান সরকারের প্রধান কর্তব্য। কারণ সংবিধানের মাধ্যমেই রাষ্ট্রীয় স্তম্ভগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে নতুন সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি গণপরিষদ গঠন করতে হবে।
এই গণপরিষদ কে অন্তত দুই বছর সময় দিতে হবে একটি কার্যকর ও জনবান্ধব নতুন সংবিধান রচনা করার জন্য। সংবিধান তাড়াহুড়ো করে লেখার কোন বিষয় নয় । পৃথিবীর সকল দেশে যথেষ্ট সময় নিয়ে সংবিধান লেখা হয়। তারপর সংবিধানের উপর বিশেষজ্ঞ ও জনমতামত নিতে হবে। সকল কাজ করার পর সংবিধান অনুমোদনের জন্য গণভোট দিতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান অনুমোদন করা হলে পরবর্তীতে কেউ সহজেই এই সংবিধান বাতিল করতে পারবে না।
অতএব মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্তম্ভগুলোর ক্ষমতার ভারসাম্য (Balance of Power) প্রতিষ্ঠায় ও জনবান্ধব সংবিধান প্রণয়নে আমার প্রস্তাব গুলো বিবেচনা করে বাধিত করবেন।