মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজার জেলা জজ আদালতে আরো একটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ নিয়ে কক্সবাজার বিচার বিভাগে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর সংখ্যা হবে মোট ৬ জন।
গত ১৬ অক্টোবর অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের উপসচিব চৌধুরী আশরাফুল করিম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজার জজশীপে নতুন একটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃষ্টি সহ সারা দেশের অধস্তন আদালতের জন্য একই পদমর্যাদার মোট ৩৯ জন বিচারকের নতুন পদ সৃষ্টির অনুমতি দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।
এরমধ্যে, ২৯টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং ১০টি অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের পদ রয়েছে। নতুন সৃজিত বিচারকদের জন্য অর্থ বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে সহায়ক কর্মচারীর পদও সৃষ্টি করা হবে বলে বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে।
কক্সবাজার বিচার বিভাগে আগে শুধুমাত্র একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের পদ ছিলো। মামলার আধিক্যের কথা বিবেচনা করে ২০২২ সালে কক্সবাজার জজশীপের জন্য আরো অতিরিক্ত ৪ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃজন করা হয়।
তখনকার সৃজিত পদে ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর থেকে ৪ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বিচারকার্যে যোগদানের মাধ্যমে কক্সবাজার বিচার বিভাগে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৫ জনে। নতুন সৃজিত পদে বিচারক পদায়ন করা হলে কক্সবাজার বিচার বিভাগে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর সংখ্যা হবে মোট ৬জন।
সারাদেশে ৩৯ জন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর নতুন পদ সৃজনের অনুমোদন দেওয়া আদালতের মধ্যে কক্সবাজার ছাড়া অন্যান্য আদালত সমুহ হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ-২, গাজীপুর-২, নরসিংদী-১, ফেনী-১, কিশোরগঞ্জ-১, নেত্রকোনা-১, জামালপুর-১, রাজবাড়ী-১, গোপালগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১, ভোলা-১, খাগড়াছড়ি-১, মৌলভীবাজার-১, রাজশাহী-১, নাটোর-১, বগুড়া-২, জয়পুরহাট-১, সাতক্ষীরা-১, যশোর-১, রংপুর-১, মেহেরপুর-১, দিনাজপুর-১, কুড়িগ্রাম-১, লালমনিরহাটে-১ সহ মোট ২৯টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং ঢাকা-৪, চট্টগ্রাম-৪ ও খুলনাতে-২ টি সহ মোট ১০টি অতিরিক্ত মহানগর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ।
আরও পড়ুন: অধস্তন আদালতে ৩৯টি বিচারক পদ সৃষ্টির অনুমতি পেল আইন ও বিচার বিভাগ
যে ৫ জন বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে বর্তমানে কক্সবাজার বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁরা হলেন-বিচারক মহিউদ্দিন মুরাদ-অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত, বিচারক মোহাম্মদ সাইফুল ইলাহী-অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত, বিচারক মোহাম্মদ আবদুল কাদের-অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ তৃতীয় আদালত, বিচারক মো: মোশারফ হোসেন-অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চতুর্থ আদালত এবং বিচারক নিশাত সুলতানা-অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পঞ্চম আদালত।
এদিকে, কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জেলা নাজির বেদারুল আলম জানান, নতুন সৃজিত আরো একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এর বিচার কার্যক্রম পরিচালনা জন্য এজলাস, খাস কামরা, সেরেস্তা সহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এর নির্দেশনায় পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যাতে নতুন সৃজিত পদে বিচারক পদায়ন করা হলে বিচারকার্য পরিচালনা করা যায়।
নতুন সৃজিত আরো একটি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচার কার্যক্রম শুরু হলে কক্সবাজার বিচার বিভাগে মামলার জট কিছুটা হলেও কমে আসবে এবং মামলা নিষ্পত্তির গতি আরো বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম ছিদ্দিকী।
আরও পড়ুন: কক্সবাজারে ইয়াবা পাচারের মামলায় এক আসামীর যাবজ্জীবন
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার বলেন, কক্সবাজার বিচার বিভাগে মামলার জট কমাতে জেলা পর্যায়ে আরো অতিরিক্ত ২জন এবং চকরিয়ার জন্য ১ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য তিনি কক্সবাজার বিচার বিভাগে আরো ৩ জন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ এর পদ সৃষ্টি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিশ্বস্ত সুত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার বিচার বিভাগে ২ হাজারের বেশি হত্যা মামলা রয়েছে। একইভাবে ২০১৮ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মৃত্যুদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন সাজার ধারায় বিচার হবে, এরকম ধারার মামলা বিচারধীন রয়েছে প্রায় দেড়হাজার। জেলা ও দায়রা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ’ই শুধুমাত্র হত্যা মামলা এবং মৃতদন্ড কিংবা যাবজ্জীবন সাজা হবে এরকম ধারার মামলার বিচার করতে পারেন।
বিচারক সংকটে কক্সবাজার বিচার বিভাগে ১৫/১৬ বছর আগে দায়ের করা হত্যা মামলা এখনো পর্যন্ত বিচার করা সম্ভব হয়নি। বহু হত্যা মামলার আসামী, বাদী, সাক্ষী, তদন্তকারী কর্মকর্তাদের অনেকেই মৃত্যুবরন করেছেন। অনেক আলামত নষ্ট হয়ে গেছে। নথির গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট থেকে লেখা মুছে যাচ্ছে। ফলে এ ধরনের হত্যা মামলা ও মাদক মামলার যথাযথ বিচার কার্য পরিচালনায় বিজ্ঞ বিচারক ও প্রসিকিউসনের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে অভিজ্ঞ আইনজীবীরা মন্তব্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারে একটি কমিশন গঠন করেছে। মামলাজট নিরসনে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে এই কমিশন।