নীতিমালা করে শিল্প প্লট বরাদ্দ দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ২০০৩ সালে দেওয়া ২৪ প্লটের বরাদ্দ শর্ত মানলে বহাল থাকবে বলে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
২০১২ সালে এ বিষয়ে স্বতপ্রণোদিতভাবে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন।
‘রাস্তাকে প্লট বানিয়ে ভাগাভাগি’ এবং ‘সড়ক প্রকল্প রাতারাতি হয়ে গেল শিল্প প্লট’ শিরোনামে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন আমলে নিয়ে ২০১২ সালে স্বতপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রুলে বরাদ্দপত্র কেন বাতিল করা হবে না এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
সেই সঙ্গে পাঁচ সচিবের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। পরে এই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করলেও তা আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে পূর্ত মন্ত্রণালয়ের দাখিল করা এক হলফনামায় ৫০ বছরে তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ৪৩৫ ব্যক্তিকে প্লট বরাদ্দ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
এক পর্যায়ে এ মামলায় পক্ষভুক্ত (ইন্টারভেনার হিসেবে) হয় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)। পক্ষভুক্ত হয়ে এইচআরপিবির শিল্প প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চান আদালতের কাছে।
সে ধারাবাহিকতায় গত বছর ৮ ফেব্রুয়ারি দেওয়া অদেশে বরাদ্দ পাওয়া ৪৩৫ প্লট মালিকের তালিকা চান হাইকোর্ট। ছবিসহ প্লটগুলোর বর্তমান অবস্থা, নকশা (লে-আউট প্ল্যান) এবং জমি অধিগ্রহণসংক্রান্ত নথিও দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে।
আরও পড়ুন: বাকশাল প্রবর্তন সংক্রান্ত সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট
সে তালিকা দাখিলের পর রুল শুনানি শুরু হয়। দীর্ঘ শুনানির পর রুল নিষ্পত্তি করে রায় দিলেন উচ্চ আদালত।
আদালতে এইচআরপিবির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, বিভিন্ন বিবাদীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, রাগিব রউফ, আব্দুল আলিম জুয়েল, মোহাম্মদ আলী, জুলহাস উদ্দিন, কে এম মাইনুদ্দিন ইসহাক, সৈয়দা নাসরিন, আব্দুল আলিম ভূঁইয়াসহ আরো অনেকে।
পূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নজরুল ইসলাম খন্দকার ও সুকুমার বিশ্বাস।
আদালত রায়ে বলেন, প্লট বরাদ্দ দেওয়ার সময় কোনো নীতিমালা ছিল না। কথিত একটি কমিটির মাধ্যমে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আগেও তাই হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া অনেকে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে এখনো শিল্প নির্মাণ করেননি।
অনেকে নির্মাণকাজই শেষ করেননি উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, যেসব প্লট মালিক চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে এখনো শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেননি, তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হোক। যৌক্তিক কারণ হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপনের কাজ শেষ করতে। নইলে চুক্তি ভঙ্গের কারণে সরকার আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। পূর্ত মন্ত্রণালয়কে এ নির্দেশ দেওয়া হয় রায়ে।
আদালত রায়ে বলেন, যেহেতু বরাদ্দ দেওয়া প্লটগুলো জনগণের সম্পত্তি, তাই এগুলো বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা থাকা দরকার এবং নীতিমালায় প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে প্রচার-প্রকাশের বিধান থাকা উচিত। ফলে পরবর্তী যেকোনো শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আগে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
রায়ের পর এইচআরপিবির প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ বলেন, বরাদ্দ প্রাপ্ত অনেকে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে এখনো শিল্প নির্মাণ করেননি। আদালত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন, যারা চুক্তি ভঙ্গ করে এখনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেননি আগামী দুই বছরের মধ্যে শিল্প স্থাপনের কার্যক্রম শেষ করতে। অন্যথায় চুক্তি ভঙ্গের কারণে সরকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন- শিল্প প্লট বরাদ্দের জন্য নীতিমালা করে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করা উচিত। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন পরবর্তী যেকোনো শিল্প প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আগেই নীতিমালা করতে।