বিচারের নামে অবিচার বন্ধ হোক

কক্সবাজারে পৃথক ২ ধর্ষণ মামলায় ৬ আসামীর যাবজ্জীবন

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : দুটি পৃথক ধর্ষণ মামলায় ৬ আসামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং বিভিন্ন পরিমাণ অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিচারক এস.এম জিললুর রহমান গত বুধবার (২০ নভেম্বর) এ রায় প্রদান করেন।

একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার উত্তম কুমার দে এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রথম মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০১৩ সালের ১৩ মে বিকেল ৫ টার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ার উত্তর হারবাং ভান্ডারীর ডেবা পাহাড়ে লাকড়ী আহরনের সময় একই এলাকার জাগের হোসেনের স্ত্রী মমতাজ বেগমকে সংঘবদ্ধ একটি দল ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা মমতাজ বেগম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ৫ জনকে আসামী করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার চকরিয়া থানা মামলা নম্বর : ২৫, তারিখ ১৪/০৫/২০১৩ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ২১৪/২০১৩ (চকরিয়া) এবং নারী নির্যাতন মামলা নম্বর ৪৬৭/২০১৩ ইংরেজি।

মামলার আসামীরা হলেন – চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার চর খাগরিয়ার মৃত হোছন আহমদের পুত্র মো: জসিম উদ্দিন, কক্সবাজারের চকরিয়ার উত্তর হারবাং এর আহমদ হোসেনের পুত্র মোঃ আবদুল অদুদ জুয়েল প্রকাশ আদাইত্যা, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আবদুল মান্নানের পুত্র মোঃ কাশেম প্রকাশ সুমন, লক্ষীপুর সদরের হুমায়ুন কবির রফিকের পুত্র মোঃ রুবেল এবং নোয়াখালীর কবিরহাটের আবু বকর ছিদ্দিকের পুত্র মোঃ রিয়াজ উদ্দিন।

বিচার ও রায়

মামলটি বিচারের জন্য ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ৬জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, ডাক্তারী পরীক্ষার সনদ পর্যালোচনা, আসামীদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য বুধবার দিন ধার্য্য করা হয়।

ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিজ্ঞ বিচারক এস.এম জিললুর রহমান আসামী মো: জসিম উদ্দিন, মোঃ আবদুল অদুদ জুয়েল প্রকাশ আদাইত্যা, মোঃ কাশেম প্রকাশ সুমন, মোঃ রুবেল এবং মোঃ রিয়াজ উদ্দিনকে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(৩) ধারায় দোষী সাব্যস্ত প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার উত্তম কুমার দে জানান, মামলায় দন্ডিত সকল আসামী পলাতক রয়েছে।

দ্বিতীয় মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২ টার দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার পূর্ব খরুলিয়ার সিকদার পাড়ার নুরুল আবছারের ৫ বছরের শিশুকে সবজী ক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করে।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা শিশুর পিতা নুরুল আবছার বাদী হয়ে একই এলাকার নবী হোছনের পুত্র ধর্ষক মো: ইলিয়াছকে আসামী করে কক্সবাজার সদর থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করেন।

যার কক্সবাজার সদর থানা মামলা নম্বর : ৮৫, তারিখ ২৬/০২/২০১৬ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ১৬১/২০১৬ (কক্সবাজার সদর) এবং নারী নির্যাতন মামলা নম্বর ৪৮/২০১৯ ইংরেজি।

বিচার ও রায়

মামলটি বিচারের জন্য ২০১৬ সালের ২৮ জুলাই চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়। মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ৫জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, আসামীকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য বুধবার দিন ধার্য্য করা হয়।

ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিজ্ঞ বিচারক এস.এম জিললুর রহমান আসামী মোঃ ইলিয়াছকে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্থ যাবজ্জীবন কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।

একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার উত্তম কুমার দে জানান, মামলায় দন্ডিত আসামী মো: ইলিয়াছ পলাতক রয়েছে।

এছাড়া, একই দিন একই আদালতে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অভিযোগে স্ত্রী লাকী শর্মার ২০২০ সালে দায়ের করা মামলায় স্বামী রাজীব শর্মাকে ২ বছর সশ্রম কারাদন্ড এবং ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। দন্ডিত আসামী পলাতক রয়েছে। দন্ডিত আসামী কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়ার নাপিত পাড়ার মৃত উপেন্দ্র শর্মা ও সোনা বালা শর্মার পুত্র।

রাষ্ট্র পক্ষে আদালতে মামলা ৩টি পরিচালনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার।