মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : অপহরণ করে ধর্ষণ করার মামলায় ৩ ভাই ও তাদের পিতাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিচারক এস.এম জিললুর রহমান সোমবার (২৫ নভেম্বর) এ রায় প্রদান করেন।
একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার উত্তম কুমার দে এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামীরা হলেন- কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার মো: কালুর পুত্র জাফর আলম এবং জাফর আলমের ৩ পুত্র যথাক্রমে মোঃ ছাদেক, মোঃ বেদার ও মো: দিদার। দন্ডিত সকল আসামী পলাতক রয়েছে।
বাদী পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দীন এবং রাষ্ট্র পক্ষে অ্যাডভোকেট একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারী সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে কক্সবাজার সদর ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বানিয়াপাড়ার আমির হোছন ও রাজিয়া বেগমের কন্যা রেসাইফা আক্তার রিফাকে তার বাড়ির সামনের রাস্তা থেকে একই এলাকার জাফর আলম এবং জাফর আলমের ৩ পুত্র যথাক্রমে মোঃ ছাদেক, মোঃ বেদার ও মো: দিদার সহ অন্যান্যরা অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে রেসাইফা আক্তার রিফাকে আসামী মো: ছাদেক ধর্ষণ করে।
এ ঘটনায় অপহৃত ধর্ষিতার মা রাজিয়া বেগম বাদী হয়ে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ অপহরণকারী জাফর আলম এবং তার ৩ পুত্র যথাক্রমে মোঃ ছাদেক, মোঃ বেদার ও মো: দিদার সহ ৫ জনকে আসামী করে অপহরণ সহ ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যার নারী নির্যাতন দমন মামলা নম্বর : ১৩৬/২০২৩ ইংরেজি এবং পিটিশন মামলা নম্বর ৪৫/২০২৩ ইংরেজি।
বিচার ও রায়
২০২৩ সালের ১৮ অক্টোবর কক্সজবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার কাজ শুরু করা হয়। মামলায় রাষ্ট্র পক্ষে ৯জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আসামীদের পক্ষে ৩ জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আলামত প্রদর্শন, আসামীদেরকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ মামলার সকল বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে মামলাটি বিচারের জন্য সোমবার দিন ধার্য্য করা হয়।
ধার্য্য দিনে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ (জেলা ও দায়রা জজ) এর বিচারক এস.এম জিললুর রহমান আসামী মোঃ ছাদেককে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং ২ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়া, একই আইনের ৭/৩০ ধারায় অপহরণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্থ করে জাফর আলম এবং জাফর আলমের ৩ পুত্র যথাক্রমে মোঃ ছাদেক, মোঃ বেদার ও মো: দিদারকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে ২ লক্ষ টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ১ বছর করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
একই আদালতের স্টেনোগ্রাফার উত্তম কুমার দে আরো জানান, মামলাটির চার্জ গঠনের পর মাত্র এক বছর, এক মাস, ৭ দিনে রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
এ রায় সম্পর্কে বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী, একিভূত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দীন বলেন, আদালতে মামলাটির যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ উত্থাপন করে আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ বাদী পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি আদালতের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ে, অপহরণ, ধর্ষণ ও অপরাধ কর্মে জড়িতদের কাছে একটা ম্যাসেজ যাবে।