মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) রুহুল আমিনকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
একটি দুর্নীতির মামলায় সাবেক ডিসি রুহুল আমিন আজ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারী) কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এর আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক শুনানী শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
আদালত গত ২৩ জানুয়ারী কক্সবাজারের সাবেক সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
তিনি আরো জানান, ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জমি অধিগ্রহণের প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে তৎকালীন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে প্রধান আসামি করে ২৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর বাসিন্দা কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশ দেন। মামলার পরপরই ১ নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দিয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে নথিপত্র পাঠান তৎকালীন জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার। কিন্তু মামলা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নাম বাদ দেওয়ার ঘটনা জানতে পেরে কয়েক দিন পর একই আদালতে আবার আরেকটি মামলা করেন বাদী কায়সারুল ইসলাম চৌধুরী। সে মামলায় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদারসহ সাতজনকে আসামি করা হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন গত বছরের ১ জুলাই কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া ও ক্রোক-পরোয়ানা জারির আবেদন জানান।
আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তার প্রতিবেদন আমলে নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারী কক্সবাজারের সাবেক সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার, সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারী) কক্সবাজারের সিনিয়র স্পেশাল জজ মুনসী আব্দুল মজিদ এর আদালতে কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক শুনানী শেষে আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেলা হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
মামলায় সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনকে বাদীর স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে মামলা থেকে দুই আসামিকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নাজির স্বপন কান্তি পাল ও কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্টেনোগ্রাফার জাফর আহমদ আগে জামিন নিয়েছেন।
দুদকের প্রতিবেদন থেকে জানা, বাদী কায়সারুল ইসলামের মামলাটি ফৌজদারি দরখাস্ত রেজিস্টারে লিপিবদ্ধের সময় জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ মোট আসামি ছিলেন ২৮ জন। কিন্তু তিনটি পৃষ্ঠায় পরিবর্তন করে এক নম্বর আসামি রুহুল আমিনের নাম বাদ দেওয়া হয়। ২ নম্বর আসামি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলমকে করা হয় এক নম্বর আসামি।
এতে বাদীর জাল স্বাক্ষরও দেওয়া হয়। পুরো নথিতে কাটাছেঁড়া ও লেখা ঘষামাজা করে দুদকে পাঠানো হয়েছিল। বাদীর জাল স্বাক্ষরের বিষয়টি সিআইডির হস্তলিপিবিশারদের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়।
আদালত সূত্র জানা গেছে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে চিংড়ি ঘের, ঘরবাড়িসহ অবকাঠামোর বিপরীতে ক্ষতিপূরণ বাবদ বরাদ্দ করা হয় ২৩৭ কোটি টাকা।
চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের বিপরীতে ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে মনগড়া ২৫টি চিংড়ি ঘের দেখিয়ে ক্ষতিপূরণের ৪৬ কোটি টাকা থেকে ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার ৩১৫ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল শাখা থেকে জানা গেছে, শুরুতে চিংড়ি ঘের অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় ২৩ কোটি টাকার চেক বিতরণ করা হয়েছিল। পরে তিনটি চেক বাতিল করা হয়। এরপর অবশিষ্ট ১৯ কোটি ৮২ লাখ ৮ হাজার টাকা যারা নিয়েছেন এবং দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাবেক জেলা প্রশাসক রুহুল আমিনসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা হয়। দুদক দীর্ঘ তদন্ত শেষে প্রায় ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পায়।
এ মামলায় ২০১৭ সালের ২২ মে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রুহুল আমিনকে তখনো কারাগারে পাঠান আদালত। এর আগে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এ মামলায় রুহুল আমিন জামিনে আছেন।
একই মামলায় ৯ মে ঢাকার সেগুনবাগিচা থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জাফর আলম, ৩ এপ্রিল কক্সবাজার শহর থেকে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সাবেক সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী নুর মোহাম্মদ সিকদারকে গ্রেপ্তার করে দুদক। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।