আদালতের আদেশ ও রায় প্রকাশে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব

আদালতের আদেশ ও রায় প্রকাশে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণের প্রস্তাব

হাইকোর্ট বিভাগের কোনো মামলায় প্রাথমিক আদেশ (রুল) ঘোষণার সর্বোচ্চ পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তা প্রকাশ করতে হবে। আদেশ ঘোষণার ক্রম অনুসারে তা প্রকাশ করতে হবে সংশ্লিষ্ট বিচারকের সইসহ। আর অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ঘোষণার পর তা প্রকাশ করতে হবে সর্বোচ্চ ১০ কার্যদিবসের মধ্যে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব রয়েছে।

একইভাবে সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় ঘোষণার পর সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে তা প্রকাশ করতে হবে। কোনো বিচারক অবসরে যাওয়ার আগে তাঁর দেওয়া সব আদেশ ও রায় চূড়ান্ত করবেন এবং তাতে সই করবেন। উল্লেখিত সময়সীমা অনুসরণ না করা হলে সংশ্লিষ্ট বিচারককে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সংস্কার কমিশন বলেছে, রায় বা আদেশ স্বাক্ষর করার ক্ষেত্রে বর্তমানে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা মানা হয় না। যার ফলে বিচারপ্রার্থী এবং তাঁদের আইনজীবীদের অনেক সময় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ষোড়শ সংশোধনী মামলার রায়ে বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধিতে রায় ঘোষণার পর সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে তা স্বাক্ষর করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয় না। এ ছাড়া মামলার আদেশ স্বাক্ষরের ক্ষেত্রেও কোনো সময়সীমা উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় কমিশন প্রস্তাব করেছে, ‘হাইকোর্ট রুলস’ সংশোধনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট সময় রাখা প্রয়োজন।

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের কোনো রায় ঘোষণার পর সর্বোচ্চ ছয় মাসের মধ্যে বিচারকের সইসহ তা প্রকাশ করতে হবে। কোনো বিচারক অবসরে যাওয়ার আগে (প্রয়োজনে বিচারকাজ থেকে বিরত থেকে) তাঁর দেওয়া সব আদেশ ও রায় চূড়ান্ত করবেন এবং তাতে সই করবেন। অবসর গ্রহণের পর বিচারক কোনো রায় বা আদেশে সই করবেন না। এই বিধান প্রধান বিচারপতির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়া সমীচীন বলে মনে করে কমিশন। আর আদেশ-রায় ঘোষণা ও তাতে সই করার বিষয়টি (উল্লেখিত সময় অনুযায়ী) অনুসরণ না করা হলে সংশ্লিষ্ট বিচারককে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

অধস্তন আদালত প্রসঙ্গ

সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ‘অধস্তন আদালত ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক একটি পরিচ্ছেদ রয়েছে। এর ভূমিকায় বলা হয়, অধস্তন আদালতে বর্তমানে বিচারাধীন প্রায় ৪৩ লাখ মামলার অধিকাংশ (প্রায় ৩৮ লাখ) নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারপ্রার্থীদের মামলার ফলাফল জানার অধিকার রয়েছে। সে জন্য সিদ্ধান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল ‘কজলিস্টে’ (আদালতের কার্যতালিকা) মামলার ফলাফল উল্লেখ করার পাশাপাশি এবং তা জেলা আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। রায় বা আদেশের পিডিএফ কপি সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে (যেদিন সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে) ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে।

সুপারিশে কমিশন বলেছে, প্রতিদিন শুনানির জন্য ততগুলো মামলা রাখতে হবে, যতগুলো শুনানি করা বা সাক্ষ্য গ্রহণ করা একজন বিচারকের পক্ষে সম্ভব। আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য বিচারককে আইনের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি মামলায় রায় ও আদেশ উন্মুক্ত এজলাসে ঘোষণা করতে হবে। অধস্তন আদালতে মামলাজট দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রতিদিনের কর্মঘণ্টার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার প্রয়োজন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরা তাঁদের সরকারি দায়িত্ব ফেলে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির হতে পারেন না, তাঁদের ক্ষেত্রে অনলাইনে সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ রয়েছে। ফৌজদারি মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা এবং ডাক্তার সাক্ষীর সাক্ষ্যসহ শতভাগ ক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর সাক্ষ্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসারে অনলাইনে গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।