ইবির আইন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের ফল প্রকাশে রিট

বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসায়ীদের জন্য হাইকোর্টের ৯ দফা নির্দেশনা

বাংলাদেশে অনলাইন ব্যবসা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এ খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। আলোচিত নারী উদ্যোক্তা রোবাইয়াত ফাতেমা তনির মালিকাধীন শোরুম ‘সানভিস বাই তনি’ পুনরায় চালু করার বিষয়ে রুল নিষ্পত্তি করতে গিয়ে আদালত ৯ দফা নির্দেশনা প্রদান করেছে উচ্চ আদালত।

বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রদান করেন। গত বছরের ১০ জুন ঘোষিত এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।

হাইকোর্টের নির্দেশিত ৯ দফা

আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক: সবাইকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে। অনলাইন মালিক এবং ভোক্তাদের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

আইনের সমান সুরক্ষা: অনলাইন ব্যবসা পরিচালনায় আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আইনের সমান সুরক্ষা লাভের অধিকারী হবে।

ব্যবসার অধিকার নিশ্চিতকরণ: প্রতিটি নাগরিকের যেকোনো বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অধিকার থাকবে এবং আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া তার ব্যবসা বন্ধ করা যাবে না।

নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের উচিত সব অনলাইন ব্যবসায়ী/মালিক/সদস্যের নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং তাদের অনলাইন ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমোদন দেওয়া।

অননুমোদিত ব্যবসা নিষিদ্ধ: এটি নিশ্চিত করতে হবে যে, কেউ কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তাদের অননুমোদিত অনলাইন ব্যবসা চালাতে, এমনকি শুরু করতেও পারবে না। এটি নিশ্চিত করা অপরিহার্য যে কোনো পোশাক খুচরা বিক্রেতা বিদেশি আসল পণ্যের সব তৈরি করতে না পারে এবং নকল পণ্য আসল হিসেবে বিক্রি করতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার না করে।

জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই: এই আইনি পরিকল্পনায় নিশ্চিত করতে হবে যে, সব ধরনের অনলাইন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের প্রশাসক, মালিক এবং ভোক্তাদের ব্যক্তিগত জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যাচাই করা উচিত।

সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার তদারকি: বিটিআরসির মতো সংশ্লিষ্ট সরকারি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে অনলাইন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করে অনলাইন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি: সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে, তারা অনলাইন গ্রাহকদের সচেতন করে তুলবে যেন অনলাইন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতারণা শিকার না হয়। গ্রাহকদের অনুমোদন/নিবন্ধন ছাড়া অনলাইন দোকান বা অনলাইন উদ্যোগ বা অনলাইন সরবরাহকারীদের কাছ থেকে কোনও পণ্য ক্রয় করা উচিত নয়।

প্রতারণাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগের উচিত প্রতারণা করা অনলাইন ব্যবসায়ীদের তাদের অপরাধের জন্য বিচার করার জন্য ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইন, ২০০৯-এ প্রয়োজনীয় আইনের বিধান সন্নিবেশ করানো।

‘সানভিস বাই তনি’ শোরুমের পুনরায় চালু

হাইকোর্টের রায় অনুসারে, রোবাইয়াত ফাতেমা তনির মালিকানাধীন শোরুম ‘সানভিস বাই তনি’ পুনরায় ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি পেয়েছে। তবে এটি যথাযথ পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে এবং প্রতি মাসে অন্তত একবার পরিদর্শন করা হবে। এছাড়া, শোরুমটিতে পাকিস্তানি পোশাক বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এর আগে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর প্রতারণার অভিযোগে গুলশানের ‘সানভিস বাই তনি’ শোরুম বন্ধ করে দেয়। অভিযোগ ছিল, দেশীয় পোশাককে পাকিস্তানি বলে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছিল।

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে হয়রানি করার অভিযোগ তুলে গত ২১ মে তনির পক্ষে রিট পিটিশন দায়ের করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ খালেকুজ্জামান।

রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৭ মে ‘সানভিস বাই তনি’ শোরুম সিলগালা করা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

১০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। ১০ দিন পর রুলের পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানানো হয়।

পরে ৬ জুন শুনানি শেষে এ বিষয়ে আদেশের জন্য ১০ জুন দিন ধার্য করেছিলেন আদালত।

আদালতে তনির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খালেকুজ্জামান। অপরপক্ষে ছিলেন আইনজীবী লুবনা ইয়াসমিন।

হাইকোর্টের এ রায় অনলাইন ব্যবসার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, তেমনি গ্রাহকদেরও প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করবে।

অনলাইন ব্যবসাকে আরও সুসংগঠিত করতে এবং বৈধ ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে এই নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে।