শরীয়তপুর বারের অবৈধ রেজুলেশন: আইনি বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
মোঃ সরোয়ার হোসাইন লাভলু

শরীয়তপুর বারের অবৈধ রেজুলেশন: আইনি বিশ্লেষণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

মোঃ সরোয়ার হোসাইন লাভলু : সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির একটি রেজুলেশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে পেশকার, পিয়নসহ অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা গ্রহণের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। এটি সরকারি আইন ও বার কাউন্সিলের বিধান পরিপন্থী, যা দুর্নীতিকে উস্কে দেবে এবং আইনজীবীদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।

যদি এই রেজুলেশন সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করেছে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আইনগতভাবে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে:

দুদক তদন্ত ও ফৌজদারি মামলা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই রেজুলেশনের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করতে পারে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর আওতায় মামলা দায়ের করতে পারে।

যদি কোনো সরকারি কর্মচারী এই টাকার হার কার্যকর করার ক্ষেত্রে জড়িত থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ধারা ১৬১ ও ১৬২ অনুযায়ী ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ আনা যেতে পারে।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের শৃঙ্খলা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদর্শ আচরণ বিধি, ১৯৭২-এর বিধি লঙ্ঘন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা নিতে পারে।

বার কাউন্সিল আইন অনুযায়ী, কোনো আইনজীবী দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত হলে বা আইন বহির্ভূত কার্যক্রমে জড়িত হলে তার সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করা যেতে পারে।

আইন মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ

আইন মন্ত্রণালয় চাইলে এই রেজুলেশন বাতিল করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে অন্য কোনো আইনজীবী সমিতি এমন বেআইনি সিদ্ধান্ত না নেয়।

রেজুলেশনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর আমি এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মোবাইল নম্বর সংগ্রহের চেষ্টা করেছি এবং তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার ফোন করেও সফল হইনি। এই বিষয়ে সরাসরি তাদের বক্তব্য নেওয়ার সুযোগ না পাওয়ায় রেজুলেশনটির ব্যাখ্যা বা সংশোধন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির এই রেজুলেশন যদি সত্য হয়, তবে এটি নৈতিক ও আইনগতভাবে সম্পূর্ণ অবৈধ। দুর্নীতি দমন কমিশন, বার কাউন্সিল ও আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত এ বিষয়ে দ্রুত তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমি এই অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অনুরোধ করছি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

লেখক : অতিরিক্ত জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর (অতিরিক্ত পিপি), চট্টগ্রাম।