লিগ্যাল নোটিশ
লিগ্যাল নোটিশ

গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে আইনি নোটিশ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ইসরাইলের সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক (De Facto Diplomacy) প্রতিষ্ঠার দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক (De Facto Diplomacy) বলতে এমন একটি বিষয় বোঝায় যেখানে কোন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়েও, সংঘাত নিরসনের স্বার্থে উক্ত রাষ্ট্রের সাথে আলোচনা করা এবং অনানুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে উক্ত আইনি নোটিশ প্রেরণ করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোঃ মাহমুদুল হাসান।

আইনি নোটিশে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২-ক অনুযায়ী রাষ্ট্র ধর্ম হলো ইসলাম। বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১অনুযায়ী ধর্ম চর্চা করা মানুষের মৌলিক অধিকার।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, সারাবিশ্বের মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখা ইসলাম ধর্ম চর্চার অন্যতম অংশ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশ ফিলিস্তিনের জনগণ অর্ধ শতাব্দীর অধিক কাল যাবৎ ইসরাইল কর্তৃক গণহত্যা, আগ্রাসন, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়ে আসছে।

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের গাজার অধিবাসীগণ ইসরাইল কর্তৃক ব্যাপকভাবে গণহত্যার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইল ব্যাপকভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে ও বোমা বর্ষণ করছে।

ফিলিস্তিন মূলত দুইটি দল কর্তৃক শাসিত হয়ে আসছে।

প্রথমত, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা অঞ্চল।

দ্বিতীয়ত, প্যালেস্টাইন অথোরিটি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর, রামাল্লা ও অন্যান্য কিছু অঞ্চল। ইসরাইল প্রতিনিয়ত প্যালেস্টাইন অথোরিটি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে ইহুদি বসতি স্থাপন করে জায়গাগুলো দখল করে নিচ্ছে।

অপর দিকে, হামাসের নেতৃত্বে গাজার জনগণ তাদের রক্ত দিয়ে গাজা অঞ্চল রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করছে।

আরও পড়ুনহাইকোর্টের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ

নোটিশে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ইসরাইল কে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। কিন্তু ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ইসরাইল যেহেতু অন্যতম প্রধান পক্ষ, তাই ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিষয়ে বাংলাদেশ চুপ থাকতে পারে না।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৫ এর নির্দেশনা অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে বাংলাদেশ কে ইসরাইলের সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে আলোচনা শুরু করতে হবে। ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডে ইসরাইলের গণহত্যায় শুধুমাত্র প্রতিবাদ লিপি প্রেরণ করা এবং শোকবার্তা প্রদান করা কোন কার্যকর সমাধান নয়।

আইনি নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ইসরাইলের সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক (De facto diplomacy) স্থাপন করার জন্য ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছাড়াও কোন রাষ্ট্রের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করা সম্ভব।

উদাহরণস্বরূপ, তাইওয়ানকে বিশ্বের বহু দেশ স্বীকৃতি দেয়নি তবুও তাইওয়ানের সাথে বহু দেশ ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে। বাংলাদেশ মায়ানমারের আরাকান আর্মিকে স্বীকৃতি দেয়নি তবুও আরাকান আর্মির দখলকৃত অঞ্চলগুলোতে ব্যাবসা বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে স্বীকৃতি দেয় নি তবুও হামাসের সাথে তারা কুটনৈতিক আলোচনা করছে। আফগানিস্তানে তালেবান সরকারকে চীন স্বীকৃতি না দিলেও, চীন সরকার আফগানিস্তানের সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে চলছে।

এ কারণে, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা বন্ধে ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে নিরসনে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকার কে ইসরাইলের সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার কে যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, মিসর ও জর্ডানের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে

উক্ত আইনি নোটিশ পাওয়ার ১৫ (পনের) দিনের মধ্যে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি গণহত্যা বন্ধে ও ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ইসরাইলের সাথে ডি ফ্যাক্টো কূটনৈতিক সম্পর্ক (De Facto Diplomacy) প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে।

অন্যথায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে মর্মে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।