মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার আলীখালী গ্রামের একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা ৩০ লাখ ৩৮ হাজার ৪০০ নগদ টাকা ও ১৭ ভরি স্বর্ণালংকার বেহাত হওয়ার ঘটনায় কোস্ট গার্ডের পিও কায়সার আহম্মেদকে আদালতে তলব করা হয়েছে।
গত বুধবার (৯ এপ্রিল) টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ আমলে নিয়ে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ বিসিজি স্টেশনের উক্ত কর্মকর্তাকে স্বশরীরে আগামী ১৩ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। ব্যাখ্যা প্রদানে ব্যর্থতায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভা:) মুহাম্মদ আশেক ইলাহী শাহজাহান নুরী এ তথ্য জানিয়েছেন। গত ৮ এপ্রিল দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে “কক্সবাজারে জব্দ টাকা ও স্বর্ণালংকারের তথ্য এজাহারে নেই” শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালী গ্রামের রশিদ মিয়া ও রশিদা বেগমের পুত্র মোঃ হারুন (৩০) এর বাড়িতে গত ৩ এপ্রিল ভোর ৪ টায় টেকনাফ বিসিজি স্টেশনের কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর টেকনাফের কেরুনতলী কন্টিনজেন্টের একটি টিম যৌথভাবে বিশেষ একটি অভিযান চালায়।
অভিযানে ৩০ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪০০ নগদ টাকা, ১৭ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েকটি অবৈধ অস্ত্র, কার্তুজ, দা, ছুরি, চেক বই, মিয়ানমারের এনআইডি কার্ড, মোবাইল ফোনের ১০টি সীম কার্ড সহ আরো বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করা হয়।
নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের নিজস্ব ফেসবুক আইডি-তে অভিযান ও উদ্ধারের বিষয়ে পৃথকভাবে ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য পোস্ট করা হয়। কোস্টগার্ড সদর দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও ৩০ লক্ষ নগদ টাকা, ১৭ ভরি স্বর্ণালংকারের তথ্য উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম বার নির্বাচন: মনোনয়ন ফরম সংগ্রহে বাধা, অভিযোগ আওয়ামীপন্থীদের
অভিযান ও উদ্ধারের বিষয়ে কোস্ট গার্ডের টেকনাফ বিসিজি স্টেশনের পিও কায়সার আহম্মেদ বাদী হয়ে বাড়ির মালিক মো: হারুনকে পলাতক আসামী উল্লেখ করে গত ৩ এপ্রিল রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ১২, তারিখ : ০৩/০৪/২০২৫ ইংরেজি এবং জিআর মামলা নম্বর : ২২৩/২০২৫ (টেকনাফ)।
আদালতে মামলার সাথে দাখিলকৃত ছবিতে এবং অভিযানকারী কর্তৃপক্ষের ফেসবুক পোস্টে ৩০ লক্ষ নগদ টাকা ও ১৭ ভরি স্বর্ণালংকারের বিষয় উল্লেখ থাকলেও জব্দ তালিকা ও মামলার এজাহারের কোথাও এসবের উল্লেখ নাই। এ বিষয়ে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে বর্ণিত সংবাদটি প্রকাশিত হয়।
সংবাদটি পর্যালোচনা করে টেকনাফের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ তাঁর নির্দেশনায় বলেন, “অত্র মামলার ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট আলামতের ছবি থাকলেও উদ্ধারকৃত নগদ ৩০ লক্ষ টাকা ও ১৭ ভরি স্বর্ণালংকারের বিষয়ে কোন তথ্য এজাহার ও জব্দ তালিকায় উল্লেখ নাই। এতে আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয় যে, মামলার বাদী কোস্ট গার্ডের পিও কায়সার আহম্মেদ অসৎ উদ্দেশ্যে উদ্ধারকৃত নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করলেও সেসব টাকা ও স্বর্ণ জব্দ তালিকামূলে জব্দ না করে নিজের আয়ত্বে রেখে আত্মসাৎ করেছেন। এমতাবস্থায়, বাদী একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়ে রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে জঘন্য অপরাধ করেছেন। যা খুবই দুঃখজনক, হতাশাব্যাঞ্জক এবং কোস্ট গার্ডের জন্য লজ্জা ও কলংকজনক।”
এ অবস্থায় কোস্ট গার্ডের টেকনাফ বিসিজি স্টেশনের পিও, মামলার বাদী কায়সার আহম্মেদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা, সে বিষয়ে আগামী ১৩ এপ্রিল আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাবেদ নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্দেশনা মতে, কক্সবাজারের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং কোস্ট গার্ডের টেকনাফ বিসিজি’র লেফটেন্যান্ট কমান্ডারকে আদালতের নির্দেশের কপি প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান, কক্সবাজার সিজেএম আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভা:) আশেক ইলাহী মোহাম্মদ শাহজাহান নুরী।
মামলার বাদী, কোস্ট গার্ডের পিও কায়সার আহম্মেদ আদালতের তলব করা পত্র তাঁর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পেয়েছেন বলে মোবাইল ফোনে জানিয়েছেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিত বলতে অস্বীকৃতি জানান।