চেকের মামলা দেওয়ানী মোকদ্দমার মতো সংশোধনী ও প্রাসঙ্গিক আইন
অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

খোলা তালাক ও মোবারাত তালাকে স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হয় না!

সিরাজ প্রামাণিক: আপনার নিশ্চয়ই খোলা তালাক ও মোবারাত তালাকের নাম শুনেছেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে তালাক সম্পাদিত হলে স্ত্রীকে আর দেনমোহর, খোরপোষ কিংবা কোন প্রকার দাবী-দাওয়া দিতে হয় না।

খোলা তালাক বা খুল তালাক বা যুক্ত তালাক উভয়ের সম্মতিতে একে অপর বন্ধনমুক্ত হতে এ তালাক অনুষ্ঠিত হয়। স্ত্রীর যদি বিবাহের কাবিননামায় তার স্বামীকে তালাকের ক্ষমতা দেয়া না থাকে এবং স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর সাথে সংসার করা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর পক্ষে সহজে স্বামীকে তালাক দিতে হলে স্বামীকে রাজী করিয়ে স্ত্রী খোলা তালাক দিতে পারেন। যদি স্বামী বা স্ত্রী একত্রে শান্তি ও সৌহার্দের মধ্যে বসবাস করতে না পারে সেক্ষেত্রে স্ত্রী তালাকের বিনিময় মূল্য প্রদান করে খুলা তালাক পেতে অধিকারিণী। (শিরিন আলম চৌধুরী বনাম ক্যাপ্টেন শামসুল আলম চৌধুরী ৪৮ ডিএলআর, পৃষ্ঠা-৭৯)।

আরও পড়ুনবর্তমান সংবিধান সংরক্ষণ কেন বিপদজনক?

অর্থাৎ স্ত্রীর পক্ষে দেনমোহর খোরপোষ ছেড়ে দিয়ে বন্ধনমুক্ত হওয়া। তবে স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। খোলা তালা প্রস্তাবক যেহেতু স্ত্রী, তাই চেয়ারম্যানের কছে স্ত্রী নোটিশ পাঠাবে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে, স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় কিংবা আগে স্বামীকে তালাকের নোটিশ দেন, তাহলে বুঝি দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। স্ত্রী আগে তালাক দিলেও তাঁর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। ব্যতিক্রম শুধু খোলা তালাক ও মোবারাত তালাকের ক্ষেত্রে। অনেক সময় স্ত্রী ঠিক বিচ্ছেদ না নিয়ে আলাদা বসবাস করতে চান। এ রকম হলেও আইনী বাধা নেই। উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে পৃথক থেকেও তিনি স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষ পেতে অধিকারিনী।

খোলা তালাকের পাশাপাশি আরেকটি তালাক রয়েছে, যাকে মোবারাত তালাক বলা হয়। এটি হলো পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদ। এ ধরনের বিবাহ বিচ্ছেদের বেলায় উভয়ই বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হয় বলে কাউকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেয়া লাগে না অর্থাৎ দেনমোহর খোরপোষ দেয়া লাগে না। শারিয়া অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট ১৯৩৭ এই তালাকের বিধান আছে। সংসার করার ক্ষেত্রে বিরূপ মনোভাবটি দু’জনের কাছ থেকে আসে তখন সেটা হয় মোবারত। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, মুবারাতের ক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দু’জনে মিলে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে তারা আর এক সাথে বসবাস করবেন না। মুবারাতের ক্ষেত্রেও একে অপরের কাছ থেকে দেনা পাওনার কোন বিষয় থাকে না। (১৬ ডিএলআর, ৩৮৯)।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও আইনগ্রন্থ প্রণেতা।