শিশু ফাইয়াজের মামলা প্রসঙ্গে যা বললেন আইন উপদেষ্টা
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল

শিশু ফাইয়াজের মামলা প্রসঙ্গে যা বললেন আইন উপদেষ্টা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়ের হওয়া ‘পুলিশ হত্যা মামলায়’ প্রধান দুই আসামি যদি তাদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতেন, তবে ১৭ বছর বয়সী হাসনাতুল ইসলাম ফাইয়াজকে আর আদালতে হাজির হতে হতো না। এখনো ফাইয়াজের মামলা প্রত্যাহার না হওয়াকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা আলোচনা চলার প্রেক্ষাপটে এ মন্তব্য করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আজ রোববার (২০ এপ্রিল) সকালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজ ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের ‘৫০তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “যেসব মামলা তদন্তাধীন থাকে, সেগুলোর ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ার এখতিয়ার শুধু পুলিশ অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তবে একটি মামলা যদি চার্জশিট পর্যায়ে পৌঁছে, তখন আইন মন্ত্রণালয় মামলাটি প্রত্যাহারের বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলা করেছিল, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং আইজিপির সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ করেছিলাম যাতে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হয়। তখন জানা যায়, বেশিরভাগ মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু মামলা, বিশেষ করে যেগুলো হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত, সেগুলো এখনো রয়ে গেছে।”

ফাইয়াজের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওই মামলায় দুইজন আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, যদি তারা সেই জবানবন্দি প্রত্যাহার না করেন, তাহলে মামলার নিষ্পত্তি করা বা ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এটি পুরোপুরি পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে, এখানে আইন মন্ত্রণালয়ের করার কিছু থাকে না।”

আরও পড়ুনবিয়ে-তালাক, উত্তরাধিকারে নারীদের সমান অধিকার দেওয়ার সুপারিশ

“আমাদের আন্তরিকতা যতই থাকুক না কেন, মামলা চার্জশিটের পর্যায়ে না এলে আইন মন্ত্রণালয় কিছু করতে পারে না,”—বলেন আসিফ নজরুল। “আমি আশা করবো, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং যারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, তারা তা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেবেন যাতে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমি ফাইয়াজের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম এবং তাকে জানিয়েছি যে এটি একটি প্রক্রিয়া। প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব। আমি তাকে বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে বলেছি।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা সবাই আইনের অধীন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ আইন মন্ত্রণালয় করতে পারে না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে পারে না। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের কাজ তাদের নিজ নিজ সীমার মধ্যেই করতে হয়। তাই যতই আমাদের আন্তরিকতা থাকুক, আইনি প্রক্রিয়া না মানলে কিছুই করা সম্ভব নয়। আমরা কেবল অনুরোধ ও পরামর্শ দিতে পারি।”

ফাইয়াজের মামলার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “যারা ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছিলেন, আমি বিশ্বাস করি তারা পুলিশের নির্যাতনের মুখে তা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর আট মাস পার হয়ে গেছে, কিন্তু তারা এখনো সেই জবানবন্দি প্রত্যাহার করেননি কেন? তাদেরই তো জিজ্ঞেস করা উচিত। তারা জবানবন্দি প্রত্যাহার করলে আজ শিশুটি (ফাইয়াজ) কোর্টে হাজির হতো না।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি মো. এমদাদুল হক।