মো: সাজ্জাদ হোসেন: সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার আপিল বোর্ড সংক্রান্ত একটি যুগান্তকারী সংশোধনী বিধিমালা জারি করেছে। এটি একদিকে দেশের প্রশাসনিক ন্যায় বিচার ব্যবস্থায় একটি স্বাগতযোগ্য পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, অন্যদিকে বাস্তবায়ন ও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে কিছু প্রশ্নও উত্থাপন করেছে।
আজকের বাংলাদেশে যেখানে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকার পাওয়ার পথ প্রায়শই দীর্ঘ ও দুর্বোধ্য, সেখানে আপিল বোর্ডের নতুন কাঠামো ও বিধিমালা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখায়। দ্রুত সময়সীমার মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা, বোর্ডের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রভাব, এবং প্রশাসনিক সুবিচারের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
বিশেষ করে যখন আদালত ও সরকারি দপ্তরের দীর্ঘসূত্রতা নাগরিক জীবনে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন এধরনের স্বতন্ত্র আপিল বোর্ড মানুষের অধিকার রক্ষার নতুন হাতিয়ার হতে পারে। প্রযুক্তির সহায়তায় আবেদন ও শুনানি প্রক্রিয়া সহজ হলে সাধারণ জনগণ আর দালাল বা অতিরিক্ত দপ্তরগত হয়রানির মুখোমুখি হবেনা।
তবে এই আশাবাদের মধ্যেও বাস্তব কিছু আশঙ্কা উপেক্ষা করা যায়না।
প্রথমত, বোর্ডের সিদ্ধান্তকে চূড়ান্ত ঘোষণা করার ফলে ভুল বা পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চতর প্রতিকার পাওয়ার পথ সীমিত হয়ে গেল। ভুল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ যদি কঠিন হয়, তবে সেটা আবারও নতুন অন্যায়ের জন্ম দিতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বোর্ডের সদস্য নির্বাচন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া। যদি সেখানে স্বচ্ছতা ও মেধাভিত্তিক নির্বাচন নিশ্চিত করা না হয়, তবে এ উদ্যোগও শেষ পর্যন্ত আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক প্রভাবের শিকার হতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, নতুন এই আপিল ব্যবস্থা যেন কেবল কাগজে-কলমে না থেকে যায়। বাস্তব প্রয়োগে যদি সময় মতো সিদ্ধান্ত না আসে, যদি পক্ষপাতের অভিযোগ ওঠে, তবে জনগণের আস্থা আরও কমবে এবং বাড়বে হতাশা।
তাই, এই নতুন কাঠামোর সফল বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে অব্যাহত নজরদারি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরও সংস্কার আনার কথা ভাবতেই হবে। নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহারের সমন্বয় ঘটাতে পারলে সংশোধিত আপীল বোর্ড বিধিমালা ২০২৫ বাংলাদেশের ন্যায়ের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় রচনা করতে পারবে।
লেখক : আইনজীবী, জেলা ও দায়রা আদালত, ঢাকা।