ভারতে নারীদের সম্পত্তির অধিকার নিয়ে এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। ছত্তীসগড়ের একটি আদিবাসী পরিবার সংক্রান্ত মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোনও রীতিনীতি বা প্রথার অনুপস্থিতিকে অজুহাত করে আদিবাসী নারী কিংবা তাদের সন্তানদের পিতৃসম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
লিঙ্গবৈষম্যের অবসান চান আদালত
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “আইন বা রীতির কোনও বাধা না থাকলে, নারী উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া লিঙ্গবৈষম্য সৃষ্টি করে। এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে।”
এই মামলার মূল কেন্দ্রে রয়েছেন ধাইয়া নামের এক আদিবাসী নারী। পিতার মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানরা মাতামহের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার দাবি করেন। কিন্তু ১৯৯২ সাল থেকে মামলা চলতে থাকে।
ট্রায়াল কোর্ট, প্রথম আপিল আদালত এবং ছত্তীসগড় হাইকোর্ট—তিনটি আদালতেই তাঁদের দাবি খারিজ হয়।
হাইকোর্টের রায়কে বাতিল করল সুপ্রিম কোর্ট
হাইকোর্টের যুক্তি ছিল, যেহেতু পরিবারটি হিন্দু উত্তরাধিকার আইন অনুসরণ করে না এবং কোনও স্বীকৃত প্রথা নেই যেখানে নারীরা সম্পত্তিতে অংশীদার হন—তাই Plaintiffs-রা অধিকার দাবিতে ব্যর্থ।
কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই রায়কে ‘পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাত’ বলে অভিহিত করে জানায়, এই ধারণার পেছনে কোনও নির্দিষ্ট প্রথা প্রতিষ্ঠিত নেই। বিচারপতিরা বলেন, “এমন কোনও আইন বা প্রথা নেই যে, মেয়েরা সম্পত্তি পাবে না। এই অনুমান অসাংবিধানিক।”
প্রথা নয়, ন্যায়বিচারই মূলনীতি
সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা করে যে, যখন নির্দিষ্ট কোনও আইন বা প্রথা অনুপস্থিত থাকে, তখন ন্যায়বিচার, সাম্য ও সদ্গতির নীতি প্রযোজ্য হবে। ১৮৭৫ সালের সেন্ট্রাল প্রোভিন্সেস ল’স অ্যাক্টের ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ীও এই নীতি স্বীকৃত।
যদিও হাইকোর্ট বলেছিল এই আইন ২০১৮ সালে বাতিল হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট জানায়— বাতিল হলেও ‘সেভিংস ক্লজ’ অনুযায়ী, আইন কার্যকর থাকা অবস্থায় অর্জিত অধিকার বজায় থাকবে। কারণ, ধাইয়ার পিতার মৃত্যু অনেক আগেই হয়েছিল।
সংবিধানের স্পষ্ট অবস্থান
সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মনে করিয়ে দেয়, সংবিধানের ১৪, ১৫(১), ৩৮ ও ৪৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। আদালত বলেন, “আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যদি নারীদের এখনও পিতার সম্পত্তিতে সমান অধিকার পেতে আদালতে আসতে হয়, তবে তা দুঃখজনক।”
দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী রায়
সুপ্রিম কোর্ট ধাইয়ার সন্তানদের মাতামহের সম্পত্তিতে সমান অধিকার দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে ট্রায়াল কোর্ট, প্রথম আপিল আদালত ও ছত্তীসগড় হাইকোর্টের ১৭ বছরের পুরনো রায় বাতিল করেছে।
এই রায় শুধু ধাইয়ার উত্তরাধিকারীদের ন্যায়বিচারই নিশ্চিত করলো না, বরং ভারতের বহু আদিবাসী নারী ও তাঁদের সন্তানদের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল।
আইনবিদদের মতে, এই রায় ভবিষ্যতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উত্তরাধিকার আইনে নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।