মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী : যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী হত্যার মামলায় স্বামীকে মৃত্যুদন্ড, একইসাথে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে মামলার অপর ৩ জন আসামীকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ওসমান গণি মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এ রায় ঘোষণা করেন।
একই আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু এ তথ্য জানিয়েছেন।
দন্ডিত আসামী মোঃ রাশেদ (২৭), পিতা : নুর আহমদ, মাতা : মরিয়ম খাতুন। দন্ডিত আসামী কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিটাছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব জুনু মাতবর পাড়ার উমখালী গ্রামের বাসিন্দা। রায় ঘোষণার সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্র পক্ষে পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু এবং আসামী পক্ষে অ্যাডভোট মোঃ হালিমুর রশিদ মামলাটি পরিচালনা করেন।
মামলার পটভূমি
২০১৬ সালের ২৭ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে দন্ডিত আসামী মোঃ রাশেদ তার বাড়িতে যৌতুক দাবি করে স্ত্রী বুলবুল আক্তারকে ধারালো দা দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে।
এ ঘটনায় মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত আসামী মোঃ রাশেদ, তার বোন আক্তার বেগম, তার ভগ্নিপতি সাইফুল ইসলাম ও তার মা মরিয়ম খাতুনকে আসামী করে নিহত বুলবুল আক্তারের বড়ভাই মইনুল ইসলাম বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে রামু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
যার রামু থানা মামলা ৩৪, তারিখ : ২৯/০৭/২০১৬ ইংরেজি। জিআর মামলা নম্বর : ২৩৫/২০১৬ (রামু)। যার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন মামলা নম্বর : ৯৩৯/২০১৮ ইংরেজি।
বিচার প্রক্রিয়া
আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শামীম জানান, মামলাটি কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী চার্জ (অভিযোগ) গঠন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। মামলায় ১৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীদের পক্ষে তাদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, ডাক্তারী পরীক্ষার রিপোর্ট, ময়নাতদন্ত, সুরতহাল প্রতিবেদন পর্যালোচনা, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের জন্য সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য্য করা হয়।
রায় ঘোষণার দিনে কক্সবাজারের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ওসমান গণি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(ক) ধারায় যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী মোঃ রাশেদকে মৃত্যুদন্ড, একইসাথে ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন। রায়ে মামলার অপর ৩ জন আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামী আক্তার বেগম, সাইফুল ইসলাম ও মরিয়ম খাতুনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
পিপি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু জানান, রাষ্ট্র পক্ষে তিনি গত ৯ মাস আগে আদালতের দায়িত্ব নেওয়ার পর হত্যা ও স্পর্শকাতর মামলা গুলো অগ্রাধিকার দিয়ে নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র পক্ষ এ হত্যা মামলাটি বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে।
একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শামীম জানান, বিজ্ঞ বিচারকের প্রদত্ত রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দন্ডিত আসামী মোঃ রাশেদ কে সাজা পরোয়ানামূলে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।