সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনি নোটিশ
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক (ফাইল ছবি)

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক কারাগারে

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যুবদল কর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাতে এ আদেশ দেন।

ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্যাহর আদালতে তার জামিন শুনানি হয়। আসামিপক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে তার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে রাখার আবেদন করা হয়।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। হাজতখানায় রাখা শেষে রাত সোয়া ৮টায় বিচারক মো. ছানাউল্যাহর এজলাসে তোলা হলে সেখানে উপস্থিত আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন—
খায়রুলের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে” ইত্যাদি।

তিন মামলা

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক খালেদ হাসান আসামিকে জেল হেফাজতে রাখার আবেদন  করেন।

আবেদনে বলা হয়, গত বছরের ১৮ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা এলাকার বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গ্রেফতারকৃত আসামির উষ্কানিতে অন্যান্য আসামিরা অস্ত্র সজ্জিত হয়ে কাজলা পুলিশ বক্সের সামনে বিকাল অনুমান ৬টার সময় শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি বর্ষণ করে।

আবেদনে বলা হয়, আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে মামলার বাদী মোঃ আলাউদ্দিন এর পুত্র আব্দুল কাইয়ুমের মুখে ও বুকে গুলি লাগলে সে পুলিশ বক্সের সামনে লুটিয়ে পড়ে এবং তার আশেপাশে থাকা আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

আসামি এবিএম খায়রুল হক প্রধান বিচারপতি থাকাকালে ২০১১ সালের ১ মে হতে বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে দুর্নীতিমূলকভাবে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতিপূর্বক প্রকৃত রায় হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছে। এ সংক্রান্ত নারায়ণগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা আছে।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় খায়রুল হকের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে রায় দেওয়া এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা রয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল বারী ভূঁইয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ ছাড়া ঢাকাতে তাঁর নামে মামলা রয়েছে।

এর আগে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে খায়রুল হককে আটক করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তারপর তাঁকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। পরে আদালতে হাজির করা হয়।

খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় এবং নারায়ণগঞ্জে মোট তিনটি মামলা রয়েছে।

বিচারপতি হিসেবে রাজনৈতিকভাবে সমালোচিত

দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১০ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান খায়রুল হক। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর নিয়োগ কার্যকর হয়। পরের বছরের ১৭ মে তিনি অবসরে যান।

আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময় খায়রুল হক ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট তিনি আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল মামলার মূল রায়দানকারী বিচারপতি হিসেবে রাজনৈতিকভাবে সমালোচিত খায়রুল হক।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (৮০) বাড়ি মাদারীপুর জেরার রাজৈর থানার আড়াইপাড়া গ্রামে।