জনতা ব্যাংকের ২৭১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় মেসার্স এপেক্স নিট কম্পোজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ব্যবসায়ী আবেদ হাসান মাহমুদ ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্দুল আজিজ খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে ঢাকার অর্থঋণ আদালত। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে। এই আটকাদেশ কার্যকরার জন্যই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ব্যাংকটির পক্ষে করা এক আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (০৬ আগস্ট) ঢাকার ৫ নাম্বার অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, নালিশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২০১০ সালে। ২০১৩ সালে ওই ঋণ একবার পুনঃতপশিল করা হয়। সুদ মৌকুফসহ পুনঃতপশিল সুবিধা পেলেও দায়িকগণ খেলাপি ঋণ পরিশোধ করেননি। এ অবস্থায় জনতা ব্যাংক লিমিটেডের মতিঝিল করপোরেট শাখা ২০১৮ সালে অর্থঋণ মামলা দায়ের করে। এ মামলার প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে ৫ মার্চ আদালত ব্যাংকের পক্ষে ডিক্রি জারি করেন।
কিন্তু মূল অর্থঋণ মামলায় ডিক্রি হওয়ার পর ৫ বছর অতিবাহিত হলেও দায়িকগণ ডিক্রিকৃত কোন টাকা পরিশোধ করেননি। বন্ধকী সম্পত্তি দায়িকগণের দখলে থাকায় ডিক্রিদার বন্ধকী সম্পত্তির উপার্জন থেকে কোনো দায় সমন্বয় করতে পারেনি। বিআরপিডি সার্কুলারের আওতায় সুদ মওকুফ সুবিধা নিয়ে দায় পরিশোধের কোনো সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ হিসাবে কোন ডাউন পেমেন্ট পরিশোধ করেননি। এ অবস্থায় ব্যাংকের পক্ষ থেকে জারি মামলা দায়ের করা হয়।
আরও পড়ুন : অবসরে পাঠানো বিচারক বিকাশ সাহা ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
বুধবার (০৬ আগস্ট) ডিক্রিদার পক্ষের আইনজীবী শুনানিতে বলেন, ডিক্রিদার জনতা ব্যাংক লিমিটেড, মতিঝিল করপোরেট শাখা কর্তৃক দায়েরকৃত ৯৮/২০১৮ নং অর্থঋণ মামলার ২০২০ সালের ৩ মার্চ তারিখের ডিক্রি থেকে এই জারি মামলার উদ্ভব। দায়িক পক্ষ নির্দেশিত সময়ের মধ্যে ডিক্রিকৃত কোনো টাকাই পরিশোধ করেননি। প্রথম কোনো মামলায় দায়িকগণের বন্ধককৃত সম্পত্তি দুই বার নিলামে বিক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হলেও কোন দরপত্র পাওয়া যায়নি। বন্ধককৃত সম্পত্তি বাবদ ডিক্রিদার ব্যাংক অর্থঋণ আইনের ৩৩(৫) ধারা মোতাবেক দখল ভোগের সনদ লাভ করলেও দায়িকগণ সামাজিকভাবে যথেষ্ট প্রভাবশালী হওয়ার কারণে উক্ত সম্পত্তি ডিক্রিদার ব্যাংক দখল গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি।
দায়িকগণের প্রতিবন্ধকতার কারণে বন্ধকি সম্পত্তি ডিক্রিদার ব্যাংক নিলামেও বিক্রয় করতে পারেনি। ডিক্রিদার দখল ভোগের সনদ পেলেও প্রকৃতপক্ষে বন্ধকী সম্পত্তি দায়িকগণের ভোগ দখলে রয়েছে। বন্ধকী সম্পত্তির যাবতীয় উপার্জন দায়িকগণ উপভোগ করলেও ডিক্রিদারের বিপুল পরিমাণ পাওনা পরিশোধে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বন্ধকী সম্পত্তির মৌজা মূল্য বাবদ ডিক্রিদার ব্যাংক ২৫ কোটি ৫৪লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা সমন্বয় দেখিয়ে এই জারী মামলা দায়ের করলেও প্রকৃত পক্ষে কোন টাকাই আদায় হয়নি। তাই বিপুল পরিমাণ ২৭১ কোটি ৫৫লাখ ৩৭ হাজার ২৬ টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে বাধ্য করার প্রয়াস হিসাবে দায়িকগণের বিরুদ্ধে দেওয়ানী আটকাদেশসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যু করা আবশ্যক।
দায়িক পক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, বন্ধকী সম্পত্তি বাবদ ডিক্রিদার ব্যাংক অর্থঋণ আদালত আইন এর ৩৩(৫) ধারা মতে সনদ লাভ করেছে। বন্ধকী সম্পত্তির বাজার মূল্য ৫০ কোটি টাকার বেশি। ডিক্রিদার ব্যাংক বন্ধকী সম্পত্তির মূল্যমান কম দেখিয়ে মাত্র ২৫ কোটি ৫৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা সমন্বয় করেছে। বন্ধকী সম্পত্তি দখল ভোগ ও মালিকানা লাভের অধিকার চর্চা না করে দায়িকগণকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে এই জারি মামলা দায়ের করেছে। তাই এই জারি মামলাটি খারিজযোগ্য। পরে আদালত দায়িক পক্ষের আবেদন নামঞ্জুর করেন। পাশাপাশি দায়িক আবেদ হাসান মাহমুদ ও দায়িক আব্দুল আজিজ খান চৌধুরীকে ৫ মাসের দেওয়ানী আটকাদেশ দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।