মামলার পাহাড়ের নেপথ্যে জরিপজনিত অনিয়ম
বাংলাদেশে সিভিল মামলার জট দিন দিন তীব্র আকার ধারণ করছে। এর একটি স্পষ্ট উদাহরণ সুনামগঞ্জ জেলা। আর.এস. জরিপ সমাপ্ত হওয়ার আগে জেলার সকল সিভিল কোর্টে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় ১০,০০০। কিন্তু জরিপ শেষ হওয়ার পর নানা ভুল-ত্রুটি ও অনিয়মের কারণে দায়ের হয় ২০,০০০-এরও বেশি নতুন মামলা। এখনও একই কারণে প্রতিনিয়ত নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে।
বিচারকের সংখ্যা অপ্রতুল
প্রথমদিকে এত বিপুল সংখ্যক নতুন মামলার বিপরীতে পুরো জেলায় ছিলেন মাত্র একজন নিয়মিত বিচারক। পরবর্তীতে সরকার আইন করে নিয়মিত সিভিল জজদের উপর অতিরিক্তভাবে এসব জরিপ মামলার দায়ভার চাপিয়ে দেয়। কিন্তু জনবল না বাড়িয়ে মামলার চাপ বাড়ানোয় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
দায় কার—বিচারক নাকি জরিপ প্রশাসন?
প্রশ্ন উঠছে, এই মামলাজটের জন্য দায়ী কে? বাস্তবতা হলো, মাঠ পর্যায়ের জরিপ কার্যক্রমে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অদক্ষতার কারণেই হাজার হাজার নতুন মামলা সৃষ্টি হয়েছে। অথচ দুঃখজনকভাবে, একই প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পরবর্তীতে মামলাজটের দায় বিচারকদের ঘাড়ে চাপিয়ে বিচারিক ক্ষমতা নিজেদের হাতে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
টেকসই সমাধান কী?
সিভিল মামলার জট কমাতে হলে প্রথমেই জরিপ কার্যক্রমকে করতে হবে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক। প্রশাসনিক ব্যর্থতার দায় বিচার বিভাগের ওপর চাপিয়ে দিলে কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান হবে না। আদালত সীমিত জনবল ও অবকাঠামো নিয়ে হাজার হাজার নতুন মামলা একা সামলাতে পারবে না।
উপসংহার
অতএব, সিভিল মামলার জট নিরসনের মূল চাবিকাঠি হলো ভুলত্রুটিমুক্ত জরিপ ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা। অন্যথায় মামলার পাহাড় শুধু উঁচুই হবে, সমাধান মিলবে না।
লেখক : মোঃ জুনাইদ; সিনিয়র সহকারী জজ, সুনামগঞ্জ।