অ্যাডভোকেট সিরাজ প্রামাণিক

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় কখন, কীভাবে জামিন পেতে পারেন?

সিরাজ প্রামাণিক : আপনি যদি নারী নির্যাতনের মামলার শিকার হয়েই যান যেমন মিথ্যা ধর্ষণের মামলা, ধর্ষণ চেষ্টার মামলা, প্রেম করে বিয়ে করার কারণে মিথ্যা অপহরণ মামলা, যৌন নির্যাতনের মামলা, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা, তাহলে আপনি কিভাবে জামিন নেবেন?

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৯ ধারায় এ মামলাসমূহের জামিনের বিধান বিধৃত হয়েছে। সরাসরি এই ট্রাইব্যুনালে জামিনের ক্ষেত্রে ১৯(৩) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি নারী বা শিশু হলে কিংবা শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে সেক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দিলে ন্যায়বিচার ব্যহত হবে না মর্মে ট্রাইব্যুনাল সন্তুষ্ট হলে তাকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবেন।

নারী, শিশু কিংবা অসুস্থ ব্যক্তি ব্যতীত অন্যান্য অপরাধীদের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল ন্যায়সঙ্গ মনে করলে কারণ লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট অপরাধীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন।

আর আসামী যদি ছাত্র হয় এবং পরীক্ষার্থী হয়, তাহলে ছাত্রজীবনের বিষয় বিবেচনা করে আদালত সেই আসামীকে জামিনে মুক্তির আদেশ দিতে পারেন। (৪০ ডিএলআর ২৪৪)। এছাড়া জামিন দিলে আসামী বা তার লোকজন বাদীপক্ষের উপর কিংবা ভিকটিমের উপর কিংবা সাক্ষীর উপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করার আশংকা না থাকলে মাননীয় আদালত আসামীর জামিন মঞ্জুর করতে পারেন।

আরও পড়ুন : জজ আদালতের নাকচের পরও জামিন দেওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটকে শোকজ

আর ফৌজদারী মামলায় অপরাধের গুরুত্ব যতই বেশী হোক না কেন, কোন আসামী পলাতক না হয়ে আদালতে উপস্থিত হয়ে বিচারের মুখোমুখী হবে মর্মে নিশ্চিত হলে বিজ্ঞ আদালত আসামীর জামিন মঞ্জুর করতে পারেন। (১৪ ডিএলআর ৩২১।

আর আসামী একাধিক হলে সহ-আসামী জামিনে মুক্তি পেয়ে থাকলে অন্য আসামীরাও জামিন পেতে হকদার। (৬৫ ডিএলআর ৫৪১)।

এছাড়া মামলার ঘটনা বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা যদি কোন সন্দেহের সৃষ্টি করে তাহলে আসামী সন্দেহের সুবিধা পাওয়ার অধিকারী, বলছেন ১৫ বিএলডি, ১৬২ পৃষ্ঠা।

আমাদের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদ অনুসারে মৌলিক অধিকার (Fundamental right) বলছেন, আইনানুগ প্রক্রিয়া ব্যতীত মানুষের জীবন, সুনাম, সম্পত্তি বা স্বাধীনতার ক্ষতিকর কোন কাজ গ্রহন করা যাবে না। কাজেই জামিনকে শাস্তি হিসাবে গণ্য করে আসামীকে আটক রাখা ঠিক নয় মর্মে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত রয়েছে। (১৩ বিএলডি ১২৩ পৃষ্ঠা)

ফৌজদারী মামলা বিচারের ক্ষেত্রে প্রধান ও মূলনীতি হলো সাক্ষী প্রমাণ দ্বারা আসামী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত আসামীকে নির্দোষ ধরে নিতে হবে। (৭ বিএলডি (এডি) ২৬৫).

এছাড়া মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হতে দেরী হলে এবং আসামী দীর্ঘদিন জেল হাজতে আটক থাকলে বিজ্ঞ আদালত আসামীকে জামিনে মুক্তি দিতে পারেন। (৫০ ডিএলআর, ১৬১)। আপনি উপরোক্ত মামলাসমূহের শিকার হলেও জামিন পেতে পারেন।

লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, আইনগ্রন্থ প্রণেতা ও পিএইচ. ডি ফেলো। ই-মেইল: seraj.pramanik@gmail.com