ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজন আসামি নির্দোষ দাবি করেছেন তাদের পক্ষে নিয়োজিত রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
তিনি বলেছেন, “আমার আসামিরা কোনো বেআইনি নির্দেশ পালন করেননি। তারা বৈধ আদেশ মেনে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তাদের ঘাড়ে অন্যের দায় চাপানো হয়েছে—উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ের মতো।”
আজ বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলার অভিযোগ গঠন নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ শুনানি গ্রহণ করেন।
অভিযোগের পটভূমি
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর রামপুরায় আমির হোসেন নামের এক তরুণকে ছাদের কার্নিশে ঝুলে থাকা অবস্থায় গুলি করে ফেলার অভিযোগ ওঠে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন। একই দিনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন নাদিম ও মায়া ইসলাম, আর মায়ার ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিলেও শিশু মুসা এখনও কথা বলতে অক্ষম।
এই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, খিলগাঁও জোনের সাবেক এডিসি মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, এসআই তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া এবং এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে মামলা হয়।
ট্রাইব্যুনালে শুনানি
শুনানিতে প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও সাইমুম রেজা তালুকদার। পরে পলাতক চার আসামির পক্ষে বক্তব্য দেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।
তিনি যুক্তি দেখান, আসামিরা কোনো সময় হেলিকপ্টার, মারণাস্ত্র বা আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। বরং তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া আসামিদের একজন মশিউর রহমান ওই আন্দোলনে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
ট্রাইব্যুনাল প্রশ্ন তোলে, “আন্দোলনে গুলি চালানো বেআইনি নয় কি?” এর জবাবে আইনজীবী বলেন, “আমার আসামিরা খিলগাঁও এলাকায় যাননি, তারা রামপুরা থানায় দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে কীভাবে গুলি চালাবেন?”
শুনানি শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় অভিযোগ গঠন নিয়ে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। স্টেট ডিফেন্সের আইনজীবীও নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। তবে আংশিক শুনানি করেছেন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা একজন আসামির আইনজীবী। তার বাকি শুনানি আগামী রোববার হবে। একই সঙ্গে আগামী মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেবেন আদালত।
আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপ
শুনানি শেষে আদালত আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত আদেশ দেওয়ার দিন ধার্য করেন। একই সঙ্গে ১৪ সেপ্টেম্বর রবিবার অবশিষ্ট শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে, গত ২৬ জানুয়ারি রাতে এ মামলার অন্যতম আসামি এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকারকে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক চার আসামির পক্ষে ট্রাইব্যুনাল ১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ দেন।