ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকিকে একদিনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুল ইসলাম মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন নাহার তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল ৩১ আগস্ট। তবে ওইদিন তদন্ত কর্মকর্তা উপস্থিত না থাকায় শুনানি পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ধার্য করা হয়।
শুনানিকালে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। রিমান্ডের পক্ষে দুদক প্রসিকিউটর বলেন, ভুয়া কোম্পানি ও কাগজপত্র দেখিয়ে মতিউর-লাকী দম্পতি কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
আসামিদের পক্ষে অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান লিটন ঢালী জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, দুদকের অভিযোগ মামলার এজাহারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মতিউর রহমান অসুস্থ, তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন : যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মেয়াদ কমানোর চিন্তা করছে সরকার : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
তবে আদালত উভয়পক্ষের যুক্তি শুনে তাদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, মতিউর রহমান ও লায়লা কানিজের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সম্পদ গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৫৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিপুল পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনাবেচায় জাল-জালিয়াতির অভিযোগও তদন্তাধীন। তাদের মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে ৫৩ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনে দম্পতির সম্পৃক্ততাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত বছরের জুলাই মাসে দুদক মতিউর পরিবারের সম্পদ বিবরণী চেয়ে নোটিশ দেয়। ওই বছরের ২৯ আগস্ট তিনি পরিবারের পাঁচ সদস্যের সম্পদ বিবরণী জমা দেন। চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করে দুদক, আর ১৪ জানুয়ারি মতিউরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের কোরবানিতে মতিউরের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কেনেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে মতিউর ও তার পরিবারের বিপুল সম্পদের তথ্য আলোচনায় আসে। পরবর্তী অনুসন্ধানে দুদক তাদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট, তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ বিপুল সম্পদের খোঁজ পায়। তাদের ব্যাংক হিসাব, মোবাইল আর্থিক সেবা অ্যাকাউন্ট ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাবও জব্দ করা হয়। পরে আদালত মতিউর, তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।