সুশীলা কারকি
সুশীলা কারকি

প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি থেকে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি

নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের পর নেপাল কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতেই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে এসেছেন তিনি।

গত সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করাকে কেন্দ্র করে নেপালে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন কে পি শর্মা অলি। পরে গত শুক্রবার সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি গ্রহণ করে পরিচিতি পান সুশীলা কারকি। তিনি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর স্বার্থের বিরুদ্ধেও অবস্থান নেন। এ কারণেই দায়িত্ব নেওয়ার এক বছরের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হয়। যদিও জনগণের চাপে প্রস্তাবটি বাতিল হয়, কিন্তু হতাশ হয়ে তিনি নিজেই পদত্যাগ করেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে এল ভান্ডারি বলেন, “তাঁর বিরুদ্ধে অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হয়েছিল, কিন্তু তিনি কখনো নিজের নীতি থেকে সরেননি। নেপালের সংকট মোকাবিলায় তিনি সঠিক ব্যক্তি।”

আরও পড়ুন : দুদকের মামলায় সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর জামিন আবেদন হাইকোর্টে

অলি পদত্যাগের পর সহিংসতা কিছুটা কমলেও এখনো দেশটির কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ জারি আছে। সেনারা রাস্তায় টহল দিচ্ছে, আর জনগণের আস্থা হারানো নেতারা গা ঢাকা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সুশীলা কারকিকে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে আনা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দীপেন্দ্র ঝা, যিনি ১০ বছর সুশীলার সঙ্গে কাজ করেছেন, বলেন, “তিনি ভালো পছন্দ, তবে তাঁর সঙ্গে একটি শক্তিশালী দল থাকতে হবে।”

সুশীলা কারকি ১৯৫২ সালে নেপালের শঙ্করপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সাত ভাই–বোনের মধ্যে তিনি বড়। ভারতের বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৭৯ সালে আইন পেশায় যোগ দেন। শিক্ষার্থী জীবনে তিনি নেপালি কংগ্রেস (এনসি) দলে সক্রিয় ছিলেন এবং ১৯৯০–এর দশকে পঞ্চায়েতব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেন। এ সময় তিনি কিছুদিন কারাভোগও করেন।

২০১৬ সালে তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ওই সময় থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর ছোট বোন জুনু দাহাল বলেন, “শৈশব থেকেই তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখতেন এবং আমাদের স্কুলে যেতে উৎসাহ দিতেন।”

সম্প্রতি ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-নিউজ এইটিন–কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুশীলা কারকি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নেপালের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। তাঁর ভাষায়, “আমরা দেশের জন্য নতুন কোনো সূচনার চেষ্টা করব।”