ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভা

গত ১৫ বছরের শাসনামলে গণমাধ্যমের ভূমিকার আত্মসমালোচনা দরকার: তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরের শাসনামলে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে আত্মসমালোচনা হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, “গণমাধ্যমকে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হতে হবে। তবেই জনগণের আস্থা ফিরে আসবে।”

ঢাকায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে ‘গণমাধ্যমে জুলাই ও তারপর’ শীর্ষক প্রকাশনা উৎসব ও আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা জানান, গত মে মাসের শেষ দিকে বা জুনের শুরুতে জাতিসংঘকে পত্র দেওয়া হয়েছিল বিগত সরকারের সময় গণমাধ্যমের অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব তদন্তের জন্য। আগস্টে জাতিসংঘ ইউনেস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে, তবে ইউনেস্কো তদন্তে আগ্রহ না দেখিয়ে সাংবাদিকদের জন্য আচরণবিধি (Code of Conduct) প্রণয়নে আগ্রহ প্রকাশ করে।

তিনি বলেন, “যেসব গণমাধ্যম অনিয়ম ও পক্ষপাতিত্ব করেছে, তাদের মালিক ও সম্পাদকদের জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। জনগণের কাছে দায়বদ্ধ হওয়া উচিত।”

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, “সেই সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কী ভূমিকা রেখেছিল, তা গবেষণার বিষয়। পিআইবিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই গবেষণার কাজ শেষ করতে হবে।”

তিনি নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখা গণমাধ্যমের মালিক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এবং বেসরকারি নতুন টেলিভিশন চ্যানেলের অনুমোদন প্রসঙ্গে বলেন, “যারা টেলিভিশনে নতুন মুখ দেখতে চান না, তারাই নতুন চ্যানেলের অনুমোদন নিয়ে হাহাকার করছেন। আমরা নতুন মিডিয়া দিতে চাই—যেখানে নতুন মুখ, নতুন বক্তব্য ও নতুন ন্যারেটিভ আসবে।”

আরও পড়ুনমিশরের ন্যাশনাল সেন্টার ফর জুডিশিয়াল স্টাডিজ পরিদর্শন করলেন প্রধান বিচারপতি

পিআইবির প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “সামর্থ্য অনুযায়ী পিআইবি দারুণ কাজ করেছে। এই প্রকাশনাগুলো ইতিহাসচর্চা ও রেফারেন্স হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে চিন্তাবিদ ও লেখক সলিমুল্লাহ খান বলেন, “পৃথিবীতে কোনো বিপ্লব শতভাগ সফল হয় না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সফলতা হলো—মানুষ এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে।” তিনি দেশের স্থিতিশীলতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর জোর দেন।

অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, “ইতিহাস থেকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে মুছে ফেলা যাবে না। এতে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন। তবে অভ্যুত্থানের পর দেশ গড়া সহজ নয়, সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।”

আরও বক্তব্য দেন গবেষক ও লেখক সাইমুম পারভেজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ এবং সভাপতিত্ব করেন পিআইবি পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরদৌস আজিম

অনুষ্ঠানে ‘তারিখে জুলাই’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবিতা’, ‘নিরীক্ষা: অভ্যুত্থান মিডিয়া বয়ান’, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান যে সাংবাদিকদের হারিয়েছি’ ও ‘ঘটনাপঞ্জি ২০২৪’—এই পাঁচটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

শেষে banglafact.com ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়।

অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন।