বিচারকরা মানবাধিকারের রক্ষক : বিচারপতি মইনুল ইসলাম

গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, গুমের বিচার নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রয়োগ জরুরি। এর সঙ্গে সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে শনিবার (১৮ অক্টোবর) ‘ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ: গুম-সংক্রান্ত ঘটনায় বিচার বিভাগের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় এ কথাগুলো বলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম। ঢাকায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন কার্যালয়ের সহযোগিতায় এ কর্মশালার আয়োজন করে গুম–সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন।

কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, গুমের ঘটনাগুলো শুধু বিচারিক প্রক্রিয়ার বিষয়ই নয়; এটি মানবাধিকার, নৈতিকতা ও জবাবদিহিরও প্রশ্ন। বিচারকদের ন্যায়বিচারের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মানবতার পক্ষে একটি অবস্থান।

গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সভাপতি বলেন, গুম প্রতিরোধে দেশের বিচারব্যবস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা জোরদারে কাজ করছে কমিশন। এই লক্ষ্যে বিচারকদের জন্য ধারাবাহিক কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন,

বিচারকদের দায়িত্ব শুধুই বিচারকার্য সম্পাদন নয়; একই সঙ্গে তাঁরা মানবাধিকারের রক্ষক ও মানবাধিকারকর্মীও।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় সংস্কার মডেল এখন পরিবর্তনশীল বিশ্বের অনুপ্রেরণা

অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা বিচারকদের উদ্দেশে বলেন,

বিচারক কেবল আইনের ব্যাখ্যাকারী নন, তিনি সমাজের বিবেক। মানবতা ছাড়া ন্যায়বিচার কেবলই একটি প্রক্রিয়া। কিন্তু সহমর্মিতার সঙ্গে ন্যায়বিচারই প্রকৃত নিরাময়।

কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম–সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য কমিশন বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রাসঙ্গিক আইনসমূহের সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।

ওই কমিশনের আরেক সদস্য মো. নূর খান লিটন তাঁর বক্তব্যে গুম প্রতিরোধে বিচারকদের দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেন। এ বিষয়ে বিচারকদের সাহসী ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান তিনি।

কমিশনের সদস্য মো. সাজ্জাদ হোসেন কর্মশালার ওয়ার্কিং সেশন পরিচালনা করেন। এ সময় অংশগ্রহণকারী বিচারকেরা গুম-সংক্রান্ত মামলায় প্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, মানবাধিকার মানদণ্ডের প্রয়োগ ও বিচারপ্রক্রিয়ার জবাবদিহি নিশ্চিতের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময় করেন।

আলোচনায় উঠে আসে গুম প্রতিরোধে স্থায়ী গুম প্রতিরোধ কমিশন গঠনের। বিচার বিভাগের আওতায় আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠন, গুম–সংক্রান্ত মামলাগুলোর জটিলতা নিরসনে স্থায়ী মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তাবও এসেছে। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং কমিশন ও বিচার বিভাগের মধ্যে তথ্য বিনিময়ের কাঠামো উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও আলোচনায় এসেছে।

দেশের বিভিন্ন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে বিচারিক কাজে নিয়োজিত বিচারক ও কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ ৯০ জন প্রশিক্ষণার্থী এ কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।