অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির
নিহত অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির

ফরিদপুরে ট্রাকচাপায় আইনজীবী নিহত, সহকর্মীদের দাবি ‘রহস্যজনক মৃত্যু’

ফরিদপুর সদর উপজেলায় ট্রাকচাপায় অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির (৪০) নামের এক আইনজীবী প্রাণ হারিয়েছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার (২৬ অক্টোবর) রাত পৌনে ৮টার দিকে ফরিদপুর শহরের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বদরপুর এলাকায়

নিহত মোসাদ্দেক আহমেদ বশির সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের মমিনখারহাটের ইছাহাক কাজীর ছেলে। তিনি ফরিদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ছিলেন।

জানা গেছে, ফরিদপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর যুব বিভাগের সভাপতি ছিলেন মোসাদ্দেক বশির। দলের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি কানাইপুর গিয়েছিলেন।

ফেরার পথে বদরপুরে তাকে বহনকারী মোটারসাইকেলকে পেছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়েন। এ সময় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান এই তরুণ আইনজীবী।

দুর্ঘটনায় তার সফরসঙ্গী আইনজীবী মজিবর রহমান পায়ে আঘাত পান।

করিমপুর হাইওয়ে থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন চৌধুরী জানান, নিহত ব্যক্তি মোটরসাইকেল চালিয়ে কানাইপুর থেকে শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। বদরপুর এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক তাঁকে চাপা দেয়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ট্রাকটি শনাক্ত ও চালককে আটক করার চেষ্টা চলছে।

তবে একদিন না যেতেই এই মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সহকর্মী ও স্বজনরা দাবি করেছেন, এটি শুধুমাত্র দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডও হতে পারে।

এক স্থানীয় অটোরিকশা চালক বলেন,

আমার সামনে মোটরসাইকেলটি যাচ্ছিল। হঠাৎ পেছন থেকে একটি ট্রাক এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। মুহূর্তেই তিনি পড়ে গিয়ে পিষ্ট হন।

আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের মৃত্যুর খবরে ফরিদপুর জজকোর্ট প্রাঙ্গণে নেমে আসে শোকের ছায়া। সহকর্মীরা হাসপাতালে ভিড় করে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

আরও পড়ুন‘গরিবের আইনজীবী’ খ্যাত আবদুল বাসেত মজুমদার: ওকালতি থেকে কল্যাণে উৎসর্গিত এক জীবন

তারা বলেন, “মোসাদ্দেক ছিলেন তরুণ, মেধাবী ও অগ্রসরমান আইনজীবী। পেশাগত সাফল্যে অনেকেই ঈর্ষান্বিত ছিলেন। তাই মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহজনক।”

অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশির ছিলেন ফরিদপুর জেলা জজ কোর্টের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এজিপি) এবং ঢাকা আইন, বিচার, সংবিধান ও মানবাধিকার বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ)’–এর সদস্য।

এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে এলআরএফ। সংগঠনের সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন এক বিবৃতিতে বলেন,

অ্যাডভোকেট মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড— তা দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে উদঘাটন করতে হবে।

এদিকে সুপ্রিম কোর্ট বিটের সাবেক সাংবাদিক ও ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী মোসাদ্দেক আহমেদ বশির এর মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম (এসআরএফ)।

এসআরএফের সভাপতি মাসউদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ডালিম এক শোক বার্তায় তাঁর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন।

তারা মরহুম মোসাদ্দেক আহমেদ বশিরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য, মোসাদ্দেক আহমেদ বশির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তিনি ঢাকা টাইমস পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট ও দুদক বিটে সাংবাদিকতা করেছেন।

এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে সাংবাদিকতা ছেড়ে আইন পেশা শুরু করেন। তিনি ফরিদপুর জজ কোর্টের একজন সুপরিচিত আইনজীবী ছিলেন।

তিনি স্ত্রী, বাবা-মা, ভাই-বোন এবং তিন কন্যা সন্তান রেখে গেছেন। বড় মেয়ের বয়স মাত্র ৬ বছর