পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশনের সদস্য হলেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী

স্বাধীনতা ব্যতীত বিচার বিভাগ কার্যত বিচার বিভাগই নয়: বিচারপ‌তি মইনুল ইসলাম চৌধুরী

সত্যিকার স্বাধীনতা ছাড়া পরিচালিত বিচার বিভাগ কার্যত কোন বিচার বিভাগই নয় মর্মে মন্তব্য করেছেন গুম কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। উল্লেখ্য যে, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধূরী সম্প্রতি নেদারল্যান্ডসের হেগ এ অবস্তিত পার্মানেন্ট কোর্ট অফ আরবিট্রেশনের (স্থায়ী সালিশ আদালত) সদস্য হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন।
নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশের জেলা বিচার বিভাগে কর্মরত বিচারকদের একাডেমিক আলোচনার উদ্দেশ্য গঠিত সংগঠন ‘জাজেস’ লিগ্যাল ডিসকাশন গ্রুপ (জে‌এল‌ডিজি)’ কর্তৃক আয়োজিত অনলাইন প্লাটফরম জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে ‘ট্রাস্ট ডেফিসিট ইন বাংলাদেশ জুডিসিয়ারি: অ্যা প্যাথোলজিক্যাল ডায়াগনসিস’ শীর্ষক শিরোনামে অনুষ্ঠিত এক ওয়েবিনারে প্রধান আলোচক হিসেবে এমন মন্তব্য করেন সাবেক বিচারপতি।
গতকাল শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১১টা হতে শুরু হয়ে দুই ঘন্টাব্যাপী চলা এ ওয়েবিনারে জেলা বিচার বিভাগের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রায় দুই শতাধিক বিচারক অংশগ্রহণ করেন।
বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “জনমানুষের আস্থাই হলো বিচার বিভাগের মূল চালিকাশক্তি বা মেরুদন্ড এবং আস্থাশীল বিচার বিভাগই হলো গণতন্ত্রের প্রাণ। বিচার বিভাগ জনমানুষের আস্থা হারালে দেশে আইনের শাসন ভেঙ্গে পড়ে। বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং বিচারকদের সততা, নৈতিকতা, সাহসিকতা এবং কর্মদক্ষতার মাধ্যমে আমাদের দেশের বিচার বিভাগের উপর জনমানুষের পরিপূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।”

আরও পড়ুননির্বাচন পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা

জেলা বিচার বিভাগের উপর থেকে সকল ধরণের নির্বাহী হস্তক্ষেপের সুযোগ বন্ধ করে আর্থিক স্বাধীনতাসহ বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানানোর পাশাপাশি সাবেক এ বিচারপতি বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে জেলা বিচার বিভাগে কর্মরত বিচারকদেরও মননে ও মগজে স্বাধীনতা লালন ও চর্চা করার আহবান জানান। এক্ষেত্রে তিনি সংবিধানের ১১৬(ক) অনুচ্ছেদ উদ্ধৃত করে বিচারকদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, বিচারকার্য পরিচালনায় তাদের স্বাধীন থাকতে হবে এবং রাজনৈতিক বা নির্বাহী কোনো প্রভাবের কাছে নতি স্বীকার করা চলবে না। বদলির ভয় উপেক্ষা করে ন্যায়বিচারকে দৃশ্যমান করার আহ্বান জানান তিনি।
পরিপূর্ণ স্বাধীনতা এবং জবাবদিহিতাকে বিচার বিভাগের দুইটি মূল পিলার হিসেবে চিত্রায়িত করে আলোচিত গুম কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে প্রশংসা কুড়ানো সাবেক এ বিচারপতি জবাবদিহিতা ব্যতীত বিচার বিভাগের উপর জনমানুষের আস্থা হারায় এবং স্বাধীনতা ব্যতীত বিচার বিভাগ কোনক্রমেই জনমানুষের বিচার বিভাগ হয়ে উঠতে পারে না মর্মে তার তাৎপর্যপূর্ণ এ আলোচনায় উল্লেখ করেন।
প্রধান আলোচকের আলোচনা শেষে উন্মুক্ত অলোচনায় অংশহণকারী বিচারকগণ বিচার বিভাগের উপর জনগণের পূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে আনতে নিজেদের নিরপেক্ষতা, সততা ও সাহসিকতা সমুন্নত রেখে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি, ২০০৭ সালের পহেলা নভেম্বরে নির্বাহী বিভাগ হতে বিচার বিভাগের ঐতিহাসিক পৃথককরণের ১৮ বছর পূর্তি স্মরণপূর্বক বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণের স্বার্থে আর্থিক স্বাধীনতাসহ সম্পূর্ণ নির্বাহী হস্তক্ষেপমুক্ত সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন, বিচারকদের বদলী ও পদায়ন নীতিমালা প্রণয়ন ও যথাশীঘ্র তা বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের প্রতি আহবান জানান।
জাজেস’ লিগ্যাল ডিসকাশন গ্রুপের কো-অর্ডিনেটর ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জনাব সাঈদ শুভ এর সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ আমিরুল ইসলাম (জেলা ও দায়রা জজ) ও মহাসচিব মোঃ মাযহারুল ইসলাম (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ)।