প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ঐতিহাসিক রায়, অধ্যাদেশ ও নীতিগত সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানবাদকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউতের বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি এ মন্তব্য করেন।
নেপালের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ মান সিং রাউত (Rt. Honorable Justice Prakash Man Singh Raut) জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের বিচার বিভাগে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম প্রত্যক্ষ, অভিজ্ঞতা বিনিময় এবং একাধিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সফর করছেন।
তিনি ১ নভেম্বর বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান।
আরও পড়ুন : তিন শতাধিক বিচারককে জেলা জজ পদে পদোন্নতির সিদ্ধান্ত
পরদিন ২ নভেম্বর সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে তিনি তাঁর সফরসঙ্গীসহ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে আগমন করেন। এ সময় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। সফরকালে তিনি সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন, বিশেষত প্রধান বিচারপতির উদ্যোগে চালু হওয়া “Supreme Court Helpline” কার্যক্রমের বাস্তবায়ন সরাসরি পরিদর্শন করেন।
এরপর সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে তিনি আপিল বিভাগের ১ নম্বর এজলাসে (প্রধান বিচারপতির এজলাস) অনুষ্ঠিত বিচারকার্য প্রত্যক্ষ করেন। এ সময় প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন।
নেপালের প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া বক্তব্য রাখেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
আরও পড়ুন : জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেলেন বিচারপতি আহমেদ সোহেল
একই দিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে, রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত “Discussion on Roadmap, Roadshow Legislative Changes, Judicial Integrity and Partnership Building” শীর্ষক আলোচনাসভায় অংশ নেন নেপালের প্রধান বিচারপতি।
এরপর বিকাল ৩টা ৩০ মিনিটে, তাঁর সভাপতিত্বে “Delivering Justice while Managing Crisis” শীর্ষক আরেকটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
পরে বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে, তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপি’র যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত “Workshop on Digitalization, Gender Justice, Specialization of Courts, Judicial Independence and Integrity” শীর্ষক কর্মশালায় যোগ দেন।
পরদিন, ৩ নভেম্বর সকাল ১০টায়, তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত “Communications and Voices from the Media; Staying Relevant; Social Media Use Protocol” শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন। এতে ল’ রিপোর্টার্স ফোরাম ও সুপ্রিম কোর্ট রিপোর্টার্স ফোরাম-এর দশজন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
সভায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংস্কারে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, যাতে নেপাল তাদের সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে।
আরও পড়ুন : রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অবৈধ সুবিধা দিলেই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
এরপর সকাল ১১টায়, তিনি “Workshop: Jurisprudence in Transitional Contexts, Exchange” শীর্ষক সেশনে যোগ দেন। সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, তিনি বলেন—
২০২৪ সালের আগস্ট মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের রোডম্যাপ প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেন। অন্তর্র্বতী সরকারের মেয়াদ অনিশ্চিত থাকা সত্ত্বেও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে তিনি দিনরাত অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান।
তিনি আরও বলেন—
বিগত ১৫ বছরের “সাংবিধানিক বিচ্যুতি”(Constitutional misadventures) এর ফলে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বিচার বিভাগের ওপর ন্যস্ত হয়েছে। সেগুলো হলো, সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সরকারের আইনগত ভিত্তিকে সহায়তা প্রদান, এবং বিচার বিভাগের স্বায়ত্বশাসন পুনরুদ্ধার।
প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ঐতিহাসিক রায় ও নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানবাদকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। তিনি বলেন,
বিগত ১৬ মাসের মাননির্ধারক এই ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত ভবিষ্যতের যেকোনো সরকার অনুসরণ করতে পারবে।
এছাড়া তিনি বিচার বিভাগীয় নেতৃত্বের মধ্যে “J2J Diplomacy” (জাজ-টু-জাজ কূটনীতি) জোরদার করার আহ্বান জানান, যাতে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও সংস্কারের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
আরও পড়ুন : ৪১ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও ৬৭ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ
নেপালের প্রধান বিচারপতির সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন Justice Sapana Pradhan Malla, Justice Binod Sharma এবং Chief Registrar Bimal Poudel।
সফর শেষে তিনি ৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন।

