ইফতি হাসান ইমরান : নির্বাহী বিভাগ থেকে ১৮ বছর আগে ম্যাজিস্ট্রেসি পৃথক হলেও আজ পর্যন্ত পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩, জেল কোড ও পুলিশ আইন ১৯৬১ এই ৩ টি আইনে বিন্দুমাত্র সংশোধন আনা হয়নি। মূল আইন হিসেবে সিআরপিসি সহ অন্যান্য বিধিবিধান সংশোধন করা হলেও ম্যাজিস্ট্রেটদের সাথে কারাগার ও পুলিশের সমন্বয়ের প্রধান তিনটি আইন-প্রবিধানে আনা হয়নি বিন্দুমাত্র পরিবর্তন। ফলে বিচারিক বিষয়ে আন্তবিভাগীয় সিদ্ধান্তহীনতা, দ্বিধা ও সমন্বয়ের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। কাজেই অবিলম্বে এই তিনটি আইন সংশোধন করে সিআরপিসির সাথে সংগতিপূর্ণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।
(ক) পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩
২০০৭ সালে নির্বাহী বিভাগ থেকে ম্যাজিস্ট্রেসি পৃথক হলে তখন সিআরপিসি সহ সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ পরিবর্তন করা হলেও পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ সংশোধন করা হয়নি। ম্যাজিস্ট্রেসি নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক হওয়ায় পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রবিধান ১৩ থেকে ৩০(ক) তে উল্লিখিত “জেলা ম্যাজিস্ট্রেট” বা কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনারদের পূর্বের ন্যায় এসব বিধানে উল্লিখিত কাজকর্ম প্রাসঙ্গিক না হওয়া সত্ত্বেও এবং চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও দায়রা জজ এর পদ উক্ত প্রবিধান সমূহে প্রাসঙ্গিক হলেও এখনো উক্ত প্রবিধানসমূহে কোনরূপ সংশোধনী আনায়ন করা হয়নি, যা বিচারিক কাজের তদারকি ও বিচারে গতিশীলতা আনায়নে জরুরী হয়ে পড়েছে।
পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ এর দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রবিধান ১৩ থেকে ৩০(ক) তে উল্লিখিত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শব্দ কর্তন হয়ে “চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট’ লিবিবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ প্রবিধানটিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার না আনায় দি কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এবং ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডার ২০০৯ এর সাথে উপর্যুক্ত প্রবিধানে সাংঘর্ষিক হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া বিচারিক নীতি প্রতিষ্ঠা ও বিচারিক নিয়ন্ত্রণকে আন্তবিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিধান্বিত করেছে।
(খ) জেল কোড
ম্যাজিস্ট্রেসি পৃথক হলেও জেল কোড এর তৃতীয় অধ্যায়ের পরিচ্ছেদ ৫ অংশের বিধি ৪৪ থেকে ৫২ পর্যন্ত বিধিতে জেলা কারাগারের নিয়ন্ত্রণ এখনো জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট রয়ে গেছে। উক্ত বিধিগুলোতে উল্লিখিত “জেলা ম্যাজিস্ট্রেট” শব্দ কর্তন হয়ে জেলা কারাগারের নিয়ন্ত্রণ “চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট” এর উপর অর্পণ হওয়া আবশ্যক।
জেল কোড এর চতুর্থ অধ্যায়ের ৫৫ বিধি অনুযায়ী স্বাস্থ্য মহাপরিচালক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা জজ, সিভিল সার্জন, অধ্যক্ষ মেডিকেল কলেজ (পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার জন্য), জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা (অনুপস্থিতিতে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কারাগার পরিদর্শক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে কারা পরিদর্শক করা হয়নি যা সুস্পষ্টভাবেই এই কোডের সংস্কারের দাবী রাখে। এছাড়া ৫৮ বিধি অনুযায়ী সরকারী ও বেসরকারী পরিদর্শগণ সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে ‘জেলা ম্যাজিস্ট্রেট’ উল্লেখ আছে যা ম্যাজিস্ট্রেসি পৃথক হওয়ার পরে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হওয়া উচিত ছিলো।
জেলা কারাগারের প্রায় ৯৫ ভাগেরও অধিক বন্দী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এর নিয়ন্ত্রণাধীন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সমূহের সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন মামলার আসামী হওয়া স্বত্ত্বেও জেলা কারাগারের নিয়ন্ত্রণ, কারাগার পরিদর্শক ও পরিদর্শকগণ সমন্বয়ে গঠিত বোর্ডের চেয়ারম্যান পদাধিকারবলে জেল কোডে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নাম না থাকাটা বিচারিক বিধি-বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে দাড়িয়েছে।
(গ) পুলিশ আইন ১৯৬১
পুলিশ আইন ১৯৬১ এর ৩০, ৩০ক ধারায় উক্ত ধারার বিষয়ে থানা ম্যাজিস্ট্রেটকে (আমলি ম্যাজিস্ট্রেট) ক্ষমতাবান করা হয়েছে এবং ৩২ ধারা মতে ম্যাজিস্ট্রেটকে (বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট) পূর্ববর্তী ৩ টি ধারার লংঘনে শাস্তি প্রদানের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। তথাপিও প্রয়োজনীয় সংশোধনের অভাবে ৩০(২) ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে এখনো এখতিয়ার দিয়ে রাখা হয়েছে এবং ৩৩ ধারা মতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে পূর্ববর্তী ৪ টি ধারার উপর সাধারণ নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয়েছে ফলে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটগণ উক্ত ক্ষমতা প্রয়োগে আগ্রহী হন না। তাছাড়া ৩৩ ধারায় বর্ণিত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এধরণের নিয়ন্ত্রণ সংবিধান পরিপন্থী বিধায় সংশোধন জরুরী হয়ে পড়েছে।
লেখক : ইফতি হাসান ইমরান; সহকারী মহাসচিব, বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন।

