দেশের সব উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলা সদরের কমপক্ষে দুটি ফার্মেসিতে অ্যান্টিভেনম রাখতে বলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। শনিবার (৮ নভেম্বর) রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরন্নবী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগে গত ১৭ আগস্ট উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টিভেনম সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ বাস্তবায়নে স্বাস্থ্যসচিব, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৮ আগস্ট বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চে।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মীর এ কে এম নুরন্নবী, সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট ইসমাঈল হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান, তানিম খান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রিটকারী মীর এ কে এম নুরন্নবী হাইকোর্টে আবেদন করেন, যেন দেশের সব উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সাপের কামড়ের অ্যান্টিভেনম সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রিটটি দাখিল করেন।
পত্রিকাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত সাপের কামড়ে দেশে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৬১০ জন দংশনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
রাজধানীর মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ‘রাসেলস ভাইপার’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন, যিনি অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর।
আরও পড়ুন : অনলাইন জুয়া: মেহেরপুরে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে প্রথম মামলা, আসামি ১৯
তিনি বলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত সাপের দংশনে ভর্তি হয়েছেন ৪১৬ জন রোগী, যার মধ্যে ৯১টি বিষধর সাপের কামড় এবং ১৮টি রাসেলস ভাইপারের দংশন। এসব ঘটনায় মোট ১১ জন মারা গেছেন, যার মধ্যে পাঁচজন চন্দ্রবোড়ার কামড়ে প্রাণ হারিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, সাম্প্রতিক সময়ে রাসেলস ভাইপার নিয়ে সারাদেশে নানা গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে সর্পদংশন একটি স্বীকৃত জনস্বাস্থ্য সমস্যা। ২০২২ সালের জাতীয় জরিপ অনুযায়ী, বছরে প্রায় চার লাখ মানুষ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হন এবং প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়।
বাংলাদেশে প্রধান বিষধর সাপগুলোর মধ্যে গোখরা, ক্রেইট (কালাচ), চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার এবং সবুজ সাপ সবচেয়ে পরিচিত। কিছু সামুদ্রিক সাপের দংশনের ঘটনাও নথিভুক্ত হয়েছে।
চন্দ্রবোড়া ভাইপারিড গোত্রের একটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপ, যার উপস্থিতি ১৯২০ সাল থেকেই বাংলাদেশে স্বীকৃত। ২০১৩ সালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া সাপের দংশনের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। প্রথমে রাজশাহী ও বরেন্দ্র অঞ্চলে দেখা গেলেও এখন এর বিস্তার ঘটেছে দেশের ২৭টি জেলায়।
ডা. রোবেদ আমিন জানান, বিষধর সর্পদংশনের একমাত্র স্বীকৃত চিকিৎসা হলো অ্যান্টিভেনম। সাধারণত বিষধর সাপের বিষ ঘোড়ার শরীরে প্রয়োগ করে, তারপর ঘোড়ার রক্তের সিরাম থেকে প্রক্রিয়াজাত করে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশে অ্যান্টিভেনম উৎপাদন করা হয় না। ভারত থেকে আমদানি করা হয়, যা চারটি প্রধান বিষধর সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর। এই অ্যান্টিভেনম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়।
যদিও অ্যান্টিভেনম ক্রয়, বিতরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের পর পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই, তবুও এর প্রয়োগে ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে বলে জানান ডা. রোবেদ আমিন।

