ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়ে সুনামগঞ্জে ৫০ বছরের পুরানো মামলা নিষ্পত্তি

জাল দলিল তৈরি করে ভাইয়ের সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা: বাদির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলার নির্দেশ

মাদারীপুরের রাজৈর সিভিল জজ আদালত গত ৯ নভেম্বর ২০২৫ এক গুরুত্বপূর্ণ রায়ে ভাইয়ের বিরুদ্ধে জাল দলিল ব্যবহার করে মিথ্যা মামলা করার অভিযোগে এক ব্যক্তির দাখিল করা মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে আদালত জাল দলিল তৈরি এবং তা খাঁটি হিসেবে আদালতের কার্যক্রমে উপস্থাপনের দায়ে বাদির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালে বাদি বীন্দ্রনাথ দাস তাঁর আপন দুই ভাই আবিনাশ দাস এবং ত্রিনাথ দাসসহ আরেকজন শরীককে বিবাদী করে দেওয়ানি ১৩৯/২০১৮ নম্বর মোকদ্দমা দাখিল করেন। বাদি ৩.৭৫ শতাংশ দাবি করে বাড়ি বণ্টনের প্রার্থনা করেন। আরজিতে তিনি দাবি করেন যে ১৯৮১ সালের ১২ মার্চ তারিখে ১২৩৭ নম্বর নিবন্ধিত দলিলমূলে তিনি নিরাঞ্জন বেপারীর কাছ থেকে ৩.৭৫ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন।

বিবাদী পক্ষ লিখিত জবাবে বাদির দাবি করা দলিলটি ভুয়া এবং জাল বলে উল্লেখ করেন। দলিলে বেশ কিছু অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হওয়ায় আদালত সংশ্লিষ্ট মহাফেজখানা থেকে বালাম বহি প্রেরণের নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী ফরিদপুর সদর মহাফেজখানা থেকে সহকারী রেকর্ড কিপার সাদিকুর রহমান দলিলের বালাম বহি এবং ইনডেক্স নিয়ে হাজির হন।

সংশ্লিষ্ট বালাম বহি এবং ইনডেক্স যাচাই করে দেখা যায় যে বাদির দাখিলকৃত দলিলটি একটি কাল্পনিক এবং জাল দলিল। এর কোনো অস্তিত্ব নেই।

রায়ে বিচারক আরিফ হোসাইন পর্যবেক্ষণে বলেন,

বাদি পক্ষ দলিলটি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলিলে উল্লেখিত বাংলা এবং ইংরেজি তারিখের অসামঞ্জস্য রয়েছে। দলিলটি প্রায় ৪৫ বছরের পুরোনো হওয়া সত্ত্বেও কাগজ, লেখা, সিল এবং স্বাক্ষরসমূহের নতুনত্ব থেকে অনুমান করা যায় যে এটি ৪৫ বছর আগে নয়, সাম্প্রতিক কালে সৃজিত হয়েছে। বাদির স্বীকৃতি মতে তাঁর জন্ম ১৯৭১ সালে। ফলে ১৯৮১ সালে দলিল সম্পাদনের সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১০ বছর। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট বালাম বহি এবং ইনডেক্স পরিদর্শনের পর এটি একটি অস্তিত্বহীন এবং জাল দলিল হিসেবে সাব্যস্ত করা যায়।

আদালত আরও মন্তব্য করেন,

জাল দলিল তৈরি করা, জাল দলিলকে খাঁটি হিসেবে আদালতে ব্যবহার করা, হলফে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া এবং আদালতের কার্যক্রমকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করা ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

রায়ে মামলাটি খারিজ করার পাশাপাশি উক্ত অপরাধসমূহের দায়ে বাদির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশও প্রদান করা হয়। উক্ত আদেশের আলোকে গত ১৩ নভেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, সদর আমলী আদালত, মাদারীপুরে বাদি বীন্দ্রনাথ দাসের বিরুদ্ধে রাজৈর সিভিল জজ আদালত কর্তৃক ফৌজদারি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজৈর সিভিল জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মনিরুজ্জামান বলেন,

এ ধরনের রায় মানুষকে সতর্ক করবে। অনেকেই মনে করেন জাল দলিল দেখিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করা যায়। কিন্তু মাননীয় বিচারক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে বালামবই এবং ইনডেক্স যাচাই করে সত্য উদঘাটন করেছেন। জাল দলিল ব্যবহার করে মামলা করলে তার ফলাফল শুধু মামলাখারিজ নয়, ফৌজদারি মামলাও হতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আইনজীবী বলেন, “বিজ্ঞ আদালতের এই যুগান্তকারী আদেশকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এ রায় এবং তৎপরবর্তী ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ ভবিষ্যতে আদালত প্রাঙ্গণে জাল দলিল ব্যবহারের প্রবণতা কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।”