চট্টগ্রামের ৮৬টি আদালতের মধ্যে বিচারক নেই ২১ আদালতে। বিচারক শূন্য এসব আদালতে বিচারাধীন আছে প্রায় ৩০ হাজার মামলা। এসব আদালতে ‘ভারপ্রাপ্ত বিচারক’ হিসেবে কাজ করছেন অন্য আদালতের বিচারকরা। বিচারক সংকটে মামলা নিষ্পত্তি যেমন দীর্ঘায়িত হচ্ছে, একইসাথে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন বিচারপ্রার্থীরা।
সর্বনিম্ন দশ বছর ও সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড সাজার খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজির মতো গুরুতর অপরাধের বিচারিক এখতিয়ার রয়েছে জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতের বিচারকদের। আপীল, রিভিশনসহ বিশেষ আইনের গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচারও হয়ে থাকে এই সব আদালতে। চট্টগ্রামে এধরনের ১৩টি আদালতের ৭টিতেই নেই কোন বিচারক। এর মধ্যে জেলার ৮টির মধ্যে ৩টি ও মহানগরের ৫টির মধ্যে ৪টির বিচারক নেই। উক্ত সাত আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ১১ হাজার ৩৬৩টি মামলা।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধিনে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে ১৩টি। এর মধ্যে পটিয়ার একমাত্র চৌকি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ ৫ আদালতে নেই কোন বিচারক। এসব আদালতে বিচারাধীন আছে ২ হাজার ৯৪৬টি। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে থাকা ৮টি আদালতের মধ্যে বিচারক নেই ২টিতে। এই দুই আদালতে ৩ হাজার ৩৮৫টি মামলা বিচারাধীন।
জেলা ও দায়রা জজের অধীনে মোট ৪৩টি আদালত রয়েছে। তিন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজসহ ৯টি বিচারক শূন্য আদালতের বাকী ৬টিই চৌকি আদালত। এই ৬ চৌকি আদালতগুলোর মধ্যে ৩টি পটিয়ার, ১টি সাতকানিয়ার, ১টি বাঁশখালীর ও ১টি রাউজানের। ১৬ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন এই ৯ আদালতে।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার চাঞ্চল্যকর মামলার বিচারের জন্য গঠিত বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্র্যাব্যুনাল বিচারক শূন্য ২০১৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী থেকে। চট্টগ্রাম বিভাগের দ্রুত বিচার আইনে গঠিত একমাত্র ট্রাইব্যুনালটিতে ৮৮টি মামলা বিচারাধীন।
বিচারক শূন্য এই ট্রাইব্যুনালের সরকারী কৌসুলী এ্যাডভোকেট আইয়ুব খান গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার চাঞ্চল্যকর মামলারগুলোর বিচার হয় উক্ত ট্রাইব্যুনালে। সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ ট্রাইব্যুনালের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রামে শুধু দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নয়, অনেক আদালতে বিচারক নেই। এতে বিচারক না থাকায় বিচার প্রার্থীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। জেলা প্রশাসনের অধিনে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ৩টি আদালত ও ৪টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত ও ১টি সার্টিফিকেট আদালত রয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) আদালত আছে ৩টি। প্রায় এসব আদালতের বিচারকগণ ব্যস্ত থাকেন প্রশাসনিক কাজে। এ আদালতগুলোতেও কয়েক হাজার মামলা রয়েছে।
বিচারপ্রার্থী সন্ধ্যা রানী রায় গণমাধ্যমকে বলেন, জেলা প্রশাসনের দক্ষিণ জেলা রাজস্ব আদালতে রোববার ও সোমবার দুইদিন বিচারক বসেন। গত ১৫ জুলাই রোবার ও ১৮ জুলাই বুধবার বিচারক না থাকায় মামলা দায়ের করতে পারিনি।
এক সপ্তাহে দুইবার চট্টগ্রাম শহরে এসে মামলা করতে না পেরে বোয়ালখালীতে ফিরে যান এই বিচারপ্রার্থী।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামের বিচারক শূন্য আদালতগুলোতে বিচারক দিয়ে বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ লাঘব করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছি। টেলিফোনেও যোগাযোগ করেছি। দিব দিচ্ছি বলে আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। কিন্তু সেটি প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।’ আজাদী