দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক আইনজীবীকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। একটি মামলার শুনানিতে আদালত বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগে কাউকে অযথা হয়রানি করলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দুদকের করা ২৬ বছরের পুরনো এক ফৌজদারি রিভিশনের শুনানিতে দুদক আইনজীবী কামরুন্নেছাকে উদ্দেশ্য করে এই সতর্কবার্তা দেন আদালত।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার (২৫ জুলাই) রুল শুনানিতে হাইকোর্ট দুই আসামির বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় সাক্ষীর জবানবন্দি, আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য আছে কি না তার প্রমাণ দাখিল করার জন্য বলেন।
কিন্তু দুদক আইনজীবী কামরুন্নেছা আদালতকে বলেন, অনেক পুরনো মামলা। এই সাক্ষীদের জবানবন্দি পাওয়া কষ্টকর। তখন আদালত বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও তথ্য-প্রমাণ নেই? দুর্নীতির অভিযোগে অযথা হয়রানি করা হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরে দুদকের আইনজীবী শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করলে আদালত মঞ্জুর করেন। এ মামলায় আগামী বুধবার (১ আগস্ট) পুনরায় শুনানি হবে।
বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ মামলার শুনানি হয়। এদিন আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুন্নেছা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোনা নাহারিন ও একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী মো. মনসুরুল হক চৌধুরী।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বেতগাড়ী খাদ্য গুদামের অধীন মেসার্স উত্তরা বয়লার অ্যান্ড রাইচ মিলসের মালিক আবু হাসান সিদ্দিকীর কাছ থেকে একটি গুদাম বিনা ভাড়ায় নেয়া হয়। আইন অনযায়ী আবু হাসান সিদ্দিকীর সঙ্গে চুক্তিও হয়। এরপর ১৯৯১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিনা ভাড়ার গুদাম লিজের পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সাত হাজার ৩৪ বস্তায় ৫২৬ দশমিক ৮৫৬ টন চাল (যার বস্তাসহ মূল্য ৫৩ লাখ ৮৩ হাজার ৯১৬ টাকা) মজুত ছিল। কিন্তু বাস্তবে যাচাইকালে ওই গুদামে কোনো খাদ্যশস্যের মজুত পাওয়া যায়নি।
পরে ১৯৯১ সালের ১২ অক্টোবর গুদাম মালিক আবু হাসান সিদ্দিকী এক লিখিত আবেদনে ওই চাল আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন। এই বিষয়ে বগুড়া জেলার তৎকালীন দুদক কর্মকর্তা গোলাম ইয়াহিয়া তদন্ত করে ১৯৯২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কোতয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
ওই মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন- মো. আবু হাসান চৌধুরী, বেতগাড়ী খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সার্জেন্ট (অব.) আনোয়ার হোসেন ও বগুড়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজির উদ্দিন আহম্মদ (বর্তমানে মৃত)।
এ মামলায় মোট চারজন কর্মকর্তা তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। কিন্তু মামলাটি বহুল আলোচিত ও অত্র ঘটনার সঙ্গে আরও ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারে বলে মনে হওয়ায় তিন সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গুদাম মালিক আবু হাসান সিদ্দিকীকে বাদ দিয়ে পাঁচজনকে আসামি করে পুনরায় আরেকটি তদন্ত করা হয়।
ওই তদন্ত শেষে ১৯৯৪ সালের ২৬ এপ্রিল এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। চার্জশিটে গুদাম মালিক আবু হাসান সিদ্দিকী, সার্জেন্ট (অব.) আনোয়ার হোসেন, বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানে আলম খান, সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও বগুড়ার সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা তাজুল ইসলামকে আসামি দেখানো হয়।
পরে মামলাটিতে ২০১৬ সালের ১২ জুলাই শুনানি হয়। শুনানি শেষে আসামি আবু হাসান সিদ্দিকী ও জানে আলম খানের বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় এবং দীর্ঘ ২৪ বছরের পুরনো মামলা বিধায় মামলার দায় থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। আসামি দুজনকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেন বগুড়া জেলার বিশেষ জজ আদালতের বিচারক এবিএম নিজামুল হক।
এরপর ওই অব্যাহতি আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ফৌজদারি রিভিশন করে দুদক। এ মামলায় ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।