কক্সবাজারে উদ্ধার হওয়া ১০ লাখ ইয়াবা বড়ি বেচে দেওয়ায় ঘটনায় জড়িত থাকা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কেন অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ হওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (৬ আগস্ট) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল দেন।
স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘১০ লাখ ইয়াবা বড়ি বেচে দিয়েও বহাল ১২ পুলিশ’ শিরোনামে ২২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে আরও তিনটি গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ গত ২৯ জুলাই রিটটি করেন, যার ওপর আজ শুনানি হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পূরবী রানী শর্মা ও পূরবী সাহা।
পরে আদেশের বিষয়টি জানিয়ে আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ঘটনায় জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযানে উদ্ধার করা ১০ লাখ ইয়াবা বড়ির মধ্যে ৯ লাখ ৯০ হাজারই মাদক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশের একটি দল। পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তে তার সত্যতাও পাওয়া গেছে। তদন্তে জেলা পুলিশ সুপার, দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ১২ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ১১ জন এখনো কক্সবাজারেই দায়িত্ব পালন করছেন। একজন আছেন চট্টগ্রামে।
আরও বলা হয়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়ার পরই অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কর্মস্থল থেকে প্রত্যাহার করে তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের কথা। এই বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছিল ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার একটি সুপারিবাগানে ইয়াবাগুলো রাখা ছিল। কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল তা উদ্ধার করে।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়াবা উদ্ধারের পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই বশির আহম্মাদ মুঠোফোনে এবং পুলিশ পরিদর্শক সুকেন্দ্র চন্দ্র সরকার নিজে পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করে জানান, অভিযানে ৭ লাখ ৩০ হাজার ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের এসআই জাবেদ আলম বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় যে মামলা করেন, তাতে মাত্র ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার দেখানো হয়। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়, তাঁরা আসলে ১০ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেছিলেন ওই দিন। বাকি ৯ লাখ ৯০ হাজার ইয়াবা তাঁরা একজন মাদক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বিক্রি করে দেন।