দেশের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও প্রতিরক্ষা বিভাগকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টাই নয়, রাষ্ট্র এবং সরকারবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সম্প্রতি বিতর্কিত ব্রোকেন ড্রিম বই লিখে এবং প্রবাসী টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়ে বিতর্কের ঝড় তুলছেন। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানকে নির্জলা, মিথ্যাচারের বিষের তীরে আঘাত করেছেন। এত মহাপ্রলয় ঘটে যাওয়ার পরও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে বহু আগে উত্থাপিত ১১টি অভিযোগের তদন্ত করে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? পর্যবেক্ষক মহলে এই প্রশ্ন জোরালোভাবেই বইছে।
১১টি অভিযোগের মধ্যে অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদেশে অর্থ পাচার ও নারী কেলেঙ্কারিসহ নৈতিক স্খলনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে দেশত্যাগ ও পদত্যাগের আগে জুডিশিয়ারি ক্যুয়ের মাধ্যমে সরকার উত্খাতের মতো ষড়যন্ত্রের নানামুখী শেকড় ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ আছে, দেশি-বিদেশি একটি মহলের যোগসাজশে গভীর ষড়যন্ত্রে তলিয়ে যাওয়া সিনহা পাকিস্তান স্টাইলে সরকারকে উচ্চ আদালত দিয়ে বিদায় করে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন অভিশপ্ত ও বিতর্কিত প্রধান বিচারপতির আবির্ভাব অতীতে কখনো আসেনি। আপিল বিভাগের বিচারকরা দুর্নীতিসহ নৈতিক স্খলনের ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে তার সঙ্গে বিচার বিভাগের পবিত্র দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করার পরও কেন বিদেশ যেতে দেওয়া হলো সেই প্রশ্ন এখন সব মহলে উঠেছে। অভিযোগ আছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ যেখানে সৎ জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে গিয়ে রিপু করা শার্ট পরতেন, বিদেশে সফরে যেতেন না, সেখানে এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি হয়ে উচ্চাভিলাষীই নন, অর্থ ও সম্পদের লোভে দুর্নীতিতে ডুবে যান। এক বছর আগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা সীমাহীন অনৈতিক অভিযোগ এনে এস কে সিনহার সঙ্গে এজলাসে বসবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।
অনেকে বলছেন, সরকার চায়নি একজন প্রধান বিচারপতির সীমাহীন দুর্নীতি, নারী কেলেঙ্কারি ও নানামুখী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিয়ে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে। কিন্তু বছর গড়াতে না গড়াতেই বহুল বিতর্কিত ও এ দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসের কলঙ্কিত খলনায়ক সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ব্রোকেন ড্রিম নামে বই প্রকাশ করে নির্জলা-মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে বিচার বিভাগকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেননি, রাষ্ট্রের অভিভাবক স্বয়ং রাষ্ট্রপতিকেও সমালোচনার তীরে ক্ষত-বিক্ষত করেছেন। অদৃশ্য শক্তির অবৈধ টাকার কাছে নিজের বিবেক ও মাথাকে বন্ধক রেখে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন মন্ত্রী, সচিব, এমনকি দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। অনেকের প্রশ্ন, তার এই ঔদ্ধত্যের শক্তি কোথায়?
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জুডিশিয়াল ক্যু করতে ব্যর্থ এই বিচারপতি সিনহা যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর ভাইয়ের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের টাকা নিয়ে গোয়েবলসিও মিথ্যাচারের দলিল ব্রোকেন ড্রিম রচনা করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া ও নিউজার্সিতে ছোট ভাইয়ের নামে বাড়ি কেনা এস কে সিনহা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ব্যাপক মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি তার স্বপ্নভঙ্গের মিথ্যাচারের দলিল রচনায় একটি গোষ্ঠী জড়িত ছিল। এমন খবর দীর্ঘদিন থেকে চাউর হয়েছে। এসব খতিয়ে দেখার এবং তার সঙ্গে যুক্ত সব দুর্নীতিবাজ ও ষড়যন্ত্রকারীদের চেহারা উন্মোচিত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এখন।
সাবেক বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য মিলেছে। গত আড়াই বছরে এই অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। বেতন ছাড়াও লাখ ও কোটির হিসাবে টাকা জমা হয়েছে ২৬ বার।
এর মধ্যে গত বছর ৯ নভেম্বর দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে দুই কোটি করে চার কোটি টাকা জমা হয় প্রধান বিচারপতির অ্যাকাউন্টে। এর আগে ৮ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার ঋণ অ্যাকাউন্ট থেকে এই চার কোটি টাকার পে-অর্ডার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে ইস্যু করা হয়।
জানা গেছে, মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি ঋণ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। দুটি অ্যাকাউন্টের তথ্য ফর্মেই বর্তমান ঠিকানা হিসেবে লেখা রয়েছে প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়ির ঠিকানা (সেক্টর ১০, সড়ক নম্বর ১২, বাড়ি নম্বর ৫১)।
দুজনেরই স্থায়ী ঠিকানা প্রধান বিচারপতির সাবেক পিএস রঞ্জিতের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি এলাকায়। রঞ্জিত বর্তমানে সিঙ্গাপুর প্রবাসী। সিঙ্গাপুর যাওয়ার আগে তিনি প্রধান বিচারপতির উত্তরার বাড়িতেই থাকতেন। এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ গণমাধ্যমে রয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন (একাত্তর) এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রচার করে।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার আয়কর রিটার্ন ও স্থাবর সম্পত্তিতে অসঙ্গতির তথ্য পাওয়া যায়। গত বছরের নভেম্বরে দাখিল করা আয়কর রিটার্নে ভাইয়ের নামে বরাদ্দ রাজউকের প্লটের ওপর নির্মিত বাড়ি নিজের নামে দেখিয়েছেন তিনি। আবার নিজের নামে বরাদ্দ প্লট আয়কর রিটার্নে দেখাননি।
প্রধান বিচারপতির ভাইয়ের প্লটের আকার ও আয়তনও বদল হয়েছে। উত্তরায় ওয়াসার পানির পাম্পের ভিতরে দেয়াল তুলে ওই প্লটটি তৈরি করে রাজউক। আইনজ্ঞরা মনে করেন, সম্পদের সঠিক বিবরণ দাখিল না করলে দুর্নীতি দমন আইনের ২৬ ও ২৭ ধারার আওতায় অপরাধ ছাড়াও আয়কর অধ্যাদেশের অধীনে বিচার্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতিকে টাকা প্রদানকারী একজন মো. শাহজাহান (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর- ৯৩১২৫৪৭৪৩১২০৩)। তার পিতার নাম আমির হোসেন (মৃত)। ঋণ আবেদনে নিজের পেশা হিসেবে চাকরি ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। তার টিআইএন উল্লেখ নেই আবেদনে।
গত বছরের ৬ নভেম্বর ঋণ অ্যাকাউন্ট (অ্যাকাউন্ট নম্বর-০১৭৩৫০০১৫৭২৮৬) খোলার পর ৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডারের জন্য আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পে-অর্ডার ইস্যু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (পে-অর্ডার নম্বর-০০৯২০৪৭)। পে-অর্ডারের পর এই অ্যাকাউন্টে আর কোনো লেনদেনও হয়নি।
সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতিকে টাকা দেওয়া আরেকজন নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা (জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর- ১৯৭৬৯৩১২৫৪৭০০০০০১)। পিতার নাম গোলক চন্দ্র সাহা। নিরঞ্জনের পেশা উল্লেখ নেই ব্যাংকের তথ্য ফর্মে। উল্লেখ নেই টিআইএনও। গত বছরের ৬ নভেম্বর ঋণ অ্যাকাউন্ট (অ্যাকাউন্ট নম্বর-০১৭৩৫০০১৫৭২২৪) খোলার পর তিনিও ৮ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডারের জন্য আবেদন করেন।
তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পে-অর্ডার ইস্যু করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ (পে-অর্ডার নম্বর-০০৯২০৪৬)। মো. শাহজাহানের মতোই নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার অ্যাকাউন্টেও পে-অর্ডারের পর আর কোনো লেনদেন নেই।
সোনালী ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখায় থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্টেও এসব তথ্যের প্রমাণ মিলেছে। গত বছরের ৯ নভেম্বর এই হিসাবে জমা হয় মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহার পাঠানো পে-অর্ডারে চার কোটি টাকা। আর এসব টাকার বিষয়ে কোনো তথ্যও নেই প্রধান বিচারপতির দাখিল করা আয়কর রিটার্নে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, এই ধরনের দুই ব্যক্তির আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে দুই কোটি করে চার কোটি টাকা লোন দেওয়া অবিশ্বাস্য। আবার এর এক দিন পরেই সেই চার কোটি টাকা প্রধান বিচারপতির বেতন অ্যাকাউন্টে জমা করার পেছনেও কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান মহীউদ্দীন খান আলমগীরের ছেলে জয় আলমগীরের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলা আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ।
এ অবস্থায় ফারমার্স ব্যাংক থেকে এমন দ্রুতগতিতে দুই ব্যক্তিকে লোন প্রদান ও সেই টাকা প্রধান বিচারপতির অ্যাকাউন্টে আসার পেছনে কোনো যোগসূত্র আছে কি-না, তা সঠিকভাবে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। এ ছাড়া এসব টাকা প্রধান বিচারপতি আয়কর রিটার্নে না দেখিয়ে থাকলে, সম্পদের সঠিক বিবরণ দাখিল না করায় দুর্নীতি দমন আইনের ২৬ ও ২৭ ধারার আওতায় অপরাধ ছাড়াও আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় বিচার্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।
নিজের আত্মজীবনী ও বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে বই লিখে নতুন করে আলোচনায় আসা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে থাকা দুর্নীতিসহ ১১টি নৈতিক স্খলনজনিত যে অভিযোগ রয়েছে তার দ্রুত তদন্ত দাবি করেছে আইনজীবীদের একটি অংশ। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন, ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিদেশে অর্থ পাচার ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে।
আইনজীবীদের দাবি, দেশের সাবেক একজন প্রধান বিচারপতি নিজে দুর্নীতি করেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। এখন নিজেই আবার মিথ্যাচার করে বই লিখছেন। তাদের মন্তব্য, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খতিয়ে দেখছে। দুদক তার বিরুদ্ধে যখন মামলা করবে, তখনই মামলা হবে। সরকার এখানে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু গণমাধ্যমকে বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগের কথা আমরা বছরখানেক আগে থেকেই শুনে আসছিলাম। ওই সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাসহ আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিরা এসব অভিযোগের বিষয়ে একমত হয়ে সিনহার সঙ্গে এজলাসে বসবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। এখন তিনি নিজে বিচার বিভাগকে কলুষিত করার জন্য মিথ্যাচার করে বই লিখছেন। সময় এসেছে বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার, যোগ করেন মোতাহার হোসেন সাজু।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান বলেন, বিচারপতি সিনহার মতো এমন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি এর আগে বিচার বিভাগে কোনো দিন দেখা যায়নি। তিনি নিজে নানা ধরনের অপকর্ম করেছেন। এখন সেই অপকর্ম ঢাকতে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।
সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বিচারপতি সিনহা দায়িত্বে থাকা অবস্থায়ও নানা অপকর্ম করে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। এখন আবার বইয়ে মনগড়া মিথ্যা কথা লিখে বাংলাদেশের বিচার বিভাগকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।
একাধিক সূত্র থেকে পাওয়া এস কে সিনহার বিরুদ্ধে থাকা ১১ অভিযোগ হলো— সাবেক এই প্রধান বিচারপতির আয়-ব্যয়ের হিসাব সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জ্ঞাত আয়ের উৎসের বাইরে থেকে ২০১৫-১৬ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংকে টাকা পাওয়া গেছে। সিঙ্গাপুরেও একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিচারপতি সিনহার দেড় কোটি টাকা ও অস্ট্রেলিয়ায় আরেকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশি টাকায় এক কোটি টাকা রয়েছে। দেশের বাইরে কোনো ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও সিনহা সেই অনুমতি নেননি। এ ছাড়া কানাডায় একটি ব্যাংকে বিচারপতি সিনহার নামে আরেকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধানও পেয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এই অ্যাকাউন্ট খুলতে সিনহা জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এস কে সিনহা তথ্য গোপন করে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ও ভাইয়ের নামে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে অবৈধভাবে প্লট নিয়েছেন। সেই প্লটের মূল্যও পরিশোধ করেননি। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় বিচারপতি সিনহার বেতন অ্যাকাউন্টে দুটি পে-অর্ডারে চার কোটি টাকা জমা হয়। এই টাকার উৎস জানাতে তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি আয়কর হিসাবেও এই টাকা দেখাননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ পন্থায় বিদেশে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করেছেন। যে ব্যক্তিকে দিয়ে টাকা পাচার করিয়েছেন তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ ছাড়াই একজন সাবেক বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা বন্ধ করতে দুদককে চিঠি দিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার এবং অধঃস্তন আদালতে বিচারক বদলির ক্ষেত্রেও ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের একজন নারী কর্মকর্তার (জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারক) সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, যার ভিডিও রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে থাকা এ ১১ অভিযোগের পাঁচটি তদন্তে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক চারটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দুটির তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন