বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভুল চিকিৎসার কারণে রওশন আরার মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসকের সনদ বাতিলসহ নিহতের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এম. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন মো. আনিসুল হাসান ও মো. শাহীনুজ্জামান।
এ প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট এম. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘রওশন আরার দুটি কিডনি অপসারণ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত। এদিকে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) কর্তৃপক্ষকে ওই দুই ডাক্তারের সনদ বাতিলপূর্বক তাদের চিকিৎসা পেশা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেছেন আদালত।’
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিসহ সংশ্লিষ্ট আটজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরা সম্প্রতি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রওশন আরার অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল।
অভিযোগ উঠে, অস্ত্রোপচারে এক কিডনি সারাতে গিয়ে রোগীর আরেক কিডনিও হারাতে হয়। এরপর গত ৩১ অক্টোবর রাতে মৃত্যুবরণ করেন রওশন আরা।
রফিক শিকদারের অভিযোগ, চিকিৎসকের অবহেলার কারণে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ে বাম কিডনির অপারেশন করাতে গেলে ডা. দুলাল তার মায়ের দুটো কিডনিই কেটে রেখে দেন। রোগীর অবস্থার অবনতি হলে অন্য হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান করার পর কিডনি চুরির এই রহস্য উদ্ঘাটিত হয়।
রফিক শিকদার বলেন, হাসপাতালের মায়ের অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার পর রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করেছে না। দ্রুত আইসিইউতে নেয়ার কথা বলেন তিনি। তবে তিনি এটাও জানান, বিএসএমএমইউতে আইসিইউ খালি নেই। একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন। ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি।
অবস্থা বেগতিক দেখে বিআরবি হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান ডাক্তার এমএ সামাদের দ্বারস্থ হই। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করে কোনো কিডনির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
যদিও রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচারের পর কিডনি উধাওয়ের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই রোগীর জন্মগত কিডনি কমপ্লিকেশন (জটিলতা) ছিল। তাছাড়া অপারেশনে রক্তক্ষরণ ও ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় বাম কিডনি অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রোগীর কিডনি দুটি নিম্নমুখী ও সংযুক্ত বা জোড়া লাগানো ছিল। যাকে বলা হয় হর্ষ কিডনি, একটা ফেলতে গেলে আরেকটাও বেরিয়ে আসে। যেটা ডাক্তার দুর্ভাগ্যক্রমে ও অনিচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দিয়েছিলেন। কারণ আলট্রাসনোগ্রাম ও সিটি স্ক্যানে বিষয়টি ধরা পড়েনি।