টাঙ্গাইলের গোপালপুরে জামাইয়ের সঙ্গে শাশুড়ির জোরকরে বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান কাদের তালুকদারসহ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গোপালপুর আমলি আদালতের বিচারক শামছুল হক রোববার (২৭ অক্টোবর) মামলাটি আমলে নিয়ে গোপালপুর থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে, গোপালপুর আমলি আদালতে শাশুড়ি মাজেদা বেগম বাদী হয়ে হাদিরা ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও কাজীসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘন, শারীরিক নির্যাতন ও ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করেন।
জামাতা মোনছেল জানান, তার সঙ্গে শাশুড়ির বিয়ে দিয়েই তারা থেমে যাননি। অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছে আসামিরা। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এবং শাস্তির দাবিতে মালাটি করা হয়েছে। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান।
বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আইন লঙ্ঘন, ধর্ম অবমানা, শারীরিক নির্যাতন ও মানহানির বিষয় উল্লেখ করে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলায় দায়ের হয়েছে। এটি একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা। আমাদের কাছে মামলার স্বপক্ষে যথেষ্ট সাক্ষী ও প্রমাণ রয়েছে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি গোপালপুরে কড়িয়াটা গ্রামে স্ত্রীকে ১১ দিনের মাথায় তালাক দিয়ে শাশুড়িকে বিয়ের ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে ঘটনাটির খবর প্রকাশিত হলে সমালোচনা শুরু হয়।
গত ২ অক্টোবর টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কড়িয়াটা গ্রামের নূর ইসলামের মেয়ে নূরন্নাহার খাতুনকে বিয়ে করেন ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোনছের আলী।
বিয়ের পরদিন শাশুড়ি মাজেদা বেগম বেড়াতে যান মেয়ের বাড়ি। সেখানে এক সপ্তাহ অবস্থানের পর ১১ অক্টোবর মেয়ে ও মেয়ের স্বামীকে নিয়ে নিজবাড়িতে ফেরেন শাশুড়ি মাজেদা। এর পরদিন সকালে নূরন্নাহার স্বামী মোনছেরের সংসার করবেন না বলে আপত্তি তোলেন মাজেদা। শুরু হয় পারিবারিক কলহ।
একপর্যায়ে মেয়ে নূরন্নাহারের স্বামী মোনছেরের সংসার না করতে অনড় থাকলে শাশুড়ি মাজেদা বেগম নতুন জামাতার সঙ্গে সংসার করবে বলে জানান। পারিবারিক এ সংকট নিরসনে অসহায় শ্বশুর নূর ইসলাম গ্রাম্য সালিশের স্মরণাপন্ন হন। এরপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অন্যান্য ইউপি সদস্য ও গ্রামবাসীদের নিয়ে সালিশ বৈঠক বসে।
সালিশে শাশুড়ি মাজেদা বেগমকে মেয়ের জামাতা মোনছের আলী বিয়ে করার খবরে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসি বাড়ি ঘেরাও করাসহ মারপিট করে। এক পর্যায়ে শাশুড়ি ও জামাতার মধ্যে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে প্রচুর মারধর করা হয়।
এরপর নুরুন্নাহারকে তালাক দিতে মোনছের আলীকে এবং তার শাশুড়িকে তালাক দিতে শ্বশুরকে বাধ্য করা হয়। একই বৈঠকে মোনছের আলী ও তার শাশুড়ির বিয়ের রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করেন কাজী গোলাম মওলা জিনহা।
যদিও ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ আইন অনুযায়ী, একই দিনে তালাক ও বিবাহ দন্ডনীয় অপরাধ। ফলে একই বৈঠকে তালাক দিয়ে এই বিয়ে কোনোভাবেই আইনসিদ্ধ নয়। আবার ইসলামি বিধান ও অনুশাসন অনুযায়ী, শাশুড়ি অর্থাৎ নিজের স্ত্রীর মাকে বিয়ে করা চিরস্থায়ী হারাম।
তবে এই ঘটনায় কোনো অভিযোগ না থাকায় এতদিন কাউকে আইনের আওতায় আনা যায়নি বলে জানিয়েছেন গোপালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান ।