পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধ ও সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য আমদানি নীতিমালায় শর্তারোপ ও বিশেষ শুল্কহার প্রনয়নের নির্দেশনা চেয়ে দায়েরকৃত রিটের ওপর শুনানি আগামী রোববার (০১ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হবে।
আজ সোমবার (২৫ নভেম্বর) আংশিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো: মাহমুদুল হাসান।
এর আগে, গত ১৮ নভেম্বর পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে আমদানি নীতিমালা সংশোধন চেয়ে জনস্বার্থে রিট আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান।
রিটে বলা হয়, বাংলাদেশে বার্ষিক পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৪ লক্ষ মেট্রিক টন কিন্তু দেশের নিজস্ব উৎপাদন এ চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। ফলশ্রুতিতে প্রতিবছর প্রায় ৮ থেকে ১০ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। বিগত বছরে বাংলাদেশ প্রায় ১১ লক্ষ মেট্রিক টন পেয়াজ আমদানি করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ার বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানিকারকগণ মূলত ভারত থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন যদিও অন্যান্য কিছু দেশ থেকে অল্প পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয়।
চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার কর্তৃক আকস্মিক ভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। বাংলাদেশের পেঁয়াজ আমদানিকারক মূলত ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে ভারত সরকার কর্তৃক পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের দরুন বাংলাদেশে পেঁয়াজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায় যা স্থানীয় জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। অর্থনীতির ভাষায়, বাজারে যদি চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম থাকে তাহলে উক্ত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে এক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখা কঠিন। ভারত সরকার কর্তৃক আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ হওয়ার দরুন বাংলাদেশে পেঁয়াজ সরবরাহের ঘাটতি দেখা দেয় যার ফলশ্রুতিতে একটি শুন্যতা সৃষ্টি হয়, যার দরুন একদিকে যেমন পেঁয়াজের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, অন্যদিকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে উক্ত সমস্যা আরো ব্যাপক আকার ধারণ করে।
উক্ত মামলার বক্তব্য অনুযায়ী এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রাজস্ব বোর্ডকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের আমদানিকারক সকল প্রকার আমদানির ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত আমদানি নীতি অনুসরণ করে থাকে। উক্ত পেঁয়াজ নিয়ে সকল প্রকার বৈদেশিক রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমদানি নীতিতে বিশেষ শর্ত আরোপ করতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে তাদের আমদানি নীতিতে এই ধরনের শর্ত আরোপ করতে হবে যে, যেসকল আমদানিকারকগণ পেঁয়াজ আমদানি করবেন তারা প্রতিবছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করবেন অথবা যে পরিমাণ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা তাদের আমদানির পেঁয়াজের অর্ধেকের বেশি অংশ কোন একক দেশ থেকে আমদানি করতে পারবেন না। উদাহরণস্বরূপ কোন আমদানিকারক যদি প্রতি বছর ৫০০০ টন পেঁয়াজ আমদানি করেন অথবা আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে তিনি কোন একক দেশ থেকে অর্ধেকের বেশি যেমন ২৫০০ টনের বেশি পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে অন্য এক বা একাধিক দেশ থেকে তাকে বাকি অর্ধেক পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। তবে উক্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমদানিকারক পরিবহন খরচ সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হবেন।
উদাহরণস্বরূপ নিকটবর্তী দেশ যেমন ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে পরিবহন খরচ কম পড়বে এবং দূরবর্তী দেশ যেমন মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে পরিবহন খরচ বেশি পড়বে। উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কে বিশেষ শুল্ক নীতি প্রণয়ন করতে হবে যেমন দূরবর্তী দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে কম শুল্ক আরোপ করতে হবে এবং নিকটবর্তী দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে অধিক পরিমাণে শুল্ক আরোপ করতে হবে যাতে করে ব্যবসায়ীরা নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যেকোন দেশ থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করুক না কেন সব মিলিয়ে তাদের আমদানি খরচ একই হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ সব সময় বিদ্যমান থাকবে এবং কোন দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাবে না এবং পেঁয়াজ নিয়ে ভবিষ্যতে এই খেলা বন্ধ হবে।