বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) রাতে জাতীয় সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
ওই নোটিশে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় দেশ ও জাতির সাথে আমরা গর্বিত এবং এজন্য ইউনেস্কো সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জাতীয় সংসদ ধন্যবাদ জানাচ্ছে।’
আরো বলা হয়, গত ৩০ অক্টোবর প্যারিসে ইউনেস্কোর সদর দফতরে সংস্থাটির মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভা এক বিজ্ঞপ্তিতে, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) দেওয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্বালাময়ী ওই ভাষণটিকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ কর্মসূচির ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ৭ই মার্চের ভাষণসহ ৭৮টি দলিলকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে রেজিস্ট্রিভুক্ত করেছে।
প্রস্তাব উত্থাপন করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়েছিলেন। যা আমরা সংবিধানের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছি, গ্রহণ করেছি। আমরা সেই ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে চিন্তা করতাম, বলতাম। আজ তা বিশ্বস্বীকৃত। জাতির জনকের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ একারণেই যে, একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে তিনি সশস্ত্র বাঙালি জাতিতে রূপান্তরিত করেছিলেন। সেদিন ১৯ মিনিটের বক্তৃতায় একদিকে ছিল স্বাধীনতার ঘোষণা, আরেক দিকে যাতে বিচ্ছন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত হতে না হয় সব দিক চিন্তা করেই ভাষণ দিয়েছিলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এসময় বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটিকে আমরা জুলিয়াস সিজার, আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, আব্রাহাম লিংকনসহ পৃথিবীর অনেক বড় বড় নেতার বক্তৃতার সঙ্গে তুলনা করতাম। আব্রহাম লিংকন ৩ মিনিট ভাষণ (দ্য গেটিসবার্গ অ্যাড্রেস) দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটি ছিল লিখিত, আর বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ছিল সম্পূর্ণ নিজের বিশ্বাসী আত্মা থেকে, অন্তর থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উৎসারিত।
তিনি বলেন, বিশ্ববরেণ্য এই নেতা একবার যা বলতেন ভেবেচিন্তেই বলতেন। তিনি একবার একটা কথা বলার পর ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও তার সেই কথার বিষয়ে আপোস করতেন না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ৭ই মার্চের ভাষণের পর ৮ই মার্চ ঢাকাক্লাবের সামনে থাকা ‘আইএসআই’ একটি রিপোর্ট করেছিল। সেখানে তারা বলেছিল চতুর শেখ মুজিব, চতুরতার সঙ্গে বক্তৃতা করে গেল। বঙ্গবন্ধু সেদিন জানতেন ওখানে গোলাবারুদ প্রস্তুত আছে, তার মধ্যে থেকেও তিনি ৭ই মার্চের ভাষণ দিলেন। কোনো বাধাই তার কণ্ঠরোধ করতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আমরা যখন কোথাও এই ভাষণ প্রচার করতাম আমাদের বাধা দেওয়া হতো। আমাদের বক্তৃতা বন্ধ করে দেওয়া হতো। বেতার, টিভিতে প্রচার করা হতো না। আজ সেই ভাষণকে ইউনেস্কো বিশ্বস্বীকৃতি দিয়েছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। বঙ্গবন্ধুর ওই ভাষণ, তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণ। এমন ভাষণ তিনি এর আগেও দেননি, পরেও দেননি। এশিয়ার মধ্যে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। ১৯ মিনিটের ভাষণে সেদিন কেবল বাঙালি জাতিকেই উজ্জীবিত করে নাই, পাল্টে দিয়েছিল বিশ্ব মানচিত্র। বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির কবি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রতিটি বাঙালিকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর খলনায়কেরা ক্ষমতায় এসে বারবার ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। বঙ্গবন্ধুকে ছোট করার অপচেষ্টা করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন হিমালয়ের মত উঁচু। হিমালয়ের নিচে বসে যদি কোনো অন্ধ হিমালয়ের উচ্চতা পরিমাপ করতে না পরে, তাহলে হিমালয়ের দোষ কি? দোষ অন্ধের।
তিনি বলেন, যতোদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতোদিন পৃথিবী থাকবে বাঙালির হৃদয়ে এই ভাষণ থাকবে। যুগে যুগে যতোদিন সংগ্রাম আসবে, চলবে, প্রতিটি মানুষ চিন্তা করবে এই ভাষণের কথা।
তিনি আরো বলেন, এরশাদ, খালেদা অনেকেই ক্ষমতায় ছিলেন। তারা এই ভাষণটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। আজ সারাদেশে এই ভাষণ উচ্চারিত হয়। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের ভাষণ প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীর জন্য বাইবেলের মতো পবিত্র ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খালেদা জিয়ার সাম্প্রতিকতম সমাবেশের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কি শুনলাম? যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে উজ্জীবিত করেছিলেন, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে মিথ্যাচার করে কলঙ্কিত করা হয়েছে। ওখানে দাঁড়িয়ে গণতন্ত্রকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।
প্রায় ৬০ জন সংসদ সদস্য এই সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তব্য রাখবেন। এখনো আলোচনা চলছে।
সংসদ প্রতিনিধি/ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম