টিটু রায়ের চার দিনের রিমান্ডে

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার টিটু রায়ের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে রিমান্ডে থাকার সময় তার শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বুধবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দীপাংসু কুমার রায় এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে শতাধিক পুলিশের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজনভ্যানে করে আদালতে হাজির করা হয় টিটু রায়কে। তার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই বাবুল হোসেন।

তিনি আবেদনে বলেন, ‘আসামি নিজে হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও এমডি টিটু নাম দিয়ে ফেসবুকে একটি আইডি খোলেন। এই আইডির মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য একটি স্ট্যাটাস দেন। প্রাথমিক তদন্তে এ বিষয়ে তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এখন এ ঘটনার মূল গডফাদার, ইন্ধনদাতাসহ কারা কারা তার সঙ্গে জড়িত তাদের নাম-ঠিকানাসহ সার্বিক বিষয়ে আরও তথ্যের প্রয়োজন। তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার।’ শুনানি শেষে বিচারক তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ভোরে নীলফামারীর জলঢাকার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনা গ্রাম থেকে টিটু রায়কে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার (১৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় টিটু রায় গোলনা গ্রামে তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় কৈলাশ চন্দ্র রায়ের বাড়ি বেড়াতে আসে। সেখান থেকে মঙ্গলবার ভোরে চারটি গাড়িতে পুলিশের একটি দল এসে তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরে ঠাকুরপাড়া গ্রাম পরিদর্শনের সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল তার গ্রেফতারের খবর নিশ্চিত করেন।

এদিকে রংপুর ডিবি পুলিশের ওসি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় খলেয়া বাজারের ব্যবসায়ী রাজু মিয়া বাদী হয়ে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি আজ বুধবার তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা এরইমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি।’

এদিকে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, ঠাকুরপাড়ায় তাণ্ডবের ঘটনায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ছয় দিনে ১৫৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাণ্ডবের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। একটি ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মালামাল লুট করার ঘটনায়। অপরটি পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দান সংক্রান্ত। দুটি মামলারই বাদী পুলিশ। আর টিটু রায়ের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলার বাদী স্থানীয় ব্যবসায়ী রাজু মিয়া।

পুলিশ জানায়, ঠাকুরপাড়ায় হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মূল সন্দেহভাজন বিএনপি নেতা এনামুল হক মাজেদী, মাসুদ রানা, ডাঙ্গিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম, জেলা পরিষদের প্রকৌশলী ফজলার রহমানসহ ইন্ধন ও অর্থের জোগানদাতাদের কাউকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, মামলার এজাহার নামীয় দুই আসামি জামায়াত নেতা সিরাজুল ইসলাম ও তার ছেলে তারেককে মঙ্গলবার গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতার করার অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, ফেসবুকে বিতর্কিত স্ট্যাটাসের অভিযোগ তুলে শুক্রবার টিটু রায়ের গ্রাম ঠাকুরপাড়ায় হামলা চালানো হয়। পুলিশ জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পর আশেপাশের ৬-৭টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে ছয় জন আহত হন। পরে আহতদের একজন মারা যান।

 

জেলা প্রতিনিধি/লইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম