প্রবীণ আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, তিনি আইনজীবীদের পরম বন্ধু। জুনিয়র আইনজীবীদের তিনি যতটা সহযোগিতা করেন এরকম আর কাউকে দেখেননি বলেও জানান প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিরি শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদারের ৮২তম জন্মদিনে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বাসেত মজুমদারের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার আমাকে নাম ধরে ডাকতেন। কিন্তু কী নামে ডাকতেন সেটা আমি বলব না। উনি (বাসেত মজুমদার) যখন আমার চেম্বারে যান, তখন আমি ওনার সঙ্গে আগের সম্পর্কের মতো কথা বলি।’
তিনি বলেন, ‘একসঙ্গে যখন আমরা কথা বলি, আমি প্রধান বিচারপতি, উনি একজন আইনজীবী এ ধরনের কোনো সম্পর্ক আমাদের থাকে না। তবে আমার সঙ্গে ওনার অনেক স্মৃতি। উনি আমার অনেক মামলা শুনানি করে দিয়েছেন। আমিও ওনার অনেক মামলা করেছি। কারণ উনি অনেক ব্যস্ত ছিলেন, ওনার কোর্টে মামলা করার সময় ছিল না।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘উনি একদিন আমাকে বললেন, তুমি এক কাজ কর আমার সিভিল মামলাগুলো তুমি শুনানি করে দিও। আমি বললাম যে, কোনো অসুবিধা নেই। তো উনি আমাকে নিয়ে যেতেন কোর্টে। কোর্টে গিয়ে বলতেন, মাই লর্ড সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম প্রয়োজনে হলে আমি আসব।’
তিনি বলেন, ‘তারপর আমি মামলার আর্গুমেন্ট করে শেষ করে দিয়েছি। মামলার জাজমেন্ট হওয়ার পর আমি খবর দিয়েছি, জাজমেন্ট হয়েছে। উনি বলতেন খুব ভালো, খুব ভালো। এরকম একটি সম্পর্ক ছিল।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উনি যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন আমি ওনার বাসায় গিয়েছি। খুব অসুস্থ দেখেছি। উনি তো এখন অনেক সুস্থ। আমি যখন ওনার বাসায় গিয়েছি, তখন দেখেছি উনি উঠে দাঁড়াতে পারতেন না। অনেক কষ্ট হতো। আমার মনে হয়, উনার স্বাস্থ্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। উনি সিঙ্গাপুর থেকেও আমাকে কয়েকবার টেলিফোন করেছেন। বলেছেন, আমার এ অবস্থা। ওনার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক সেটি আজীবন থাকবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ড. বশির আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জল হোসেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট উভয় বিভাগের বিচারকরা। এছাড়া বাসেত মজুমদারকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আসেন সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার।
এছাড়া আইনজীবীদের মধ্যে বাসেত মজুমদারকে শুভেচ্ছা জানান অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এএফ হাসান আরিফ, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাবির সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী, রহমত উল্লাহ এমপি ও সাবেক এমপি জয়নাল হাজারী, অ্যাডভোকেট আজাহারুল্লাহ ভুইয়া, জেসমিন সুলতানা, মোতাহার হোসেন সাজু ও ড. মো. বশির উল্লাহ।
উল্লেখ্য, আইন পেশায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়োজিত অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদারের জন্ম ১৯৩৮ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৬৬ সালে আইনাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে বাসেত মজুমদার গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের কল্যাণে আজ পর্যন্ত অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। দুস্থ আইনজীবীদের জন্য নিজের নামে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছেন। দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতিতে এই ফান্ড থেকে অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দীর্ঘ পেশাজীবনে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে আইনি সহায়তা দিয়েছেন।