বহুল আলোচিত নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচারের কথা উল্লেখ করে সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘সরকার চাইলে দেশে বিচার দ্রুত হয়, আর না চাইলে ৭০ বার মামলার চার্জশিট পেছায়।’
জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বুধবার (১৫ জানুয়ারি) এ কথা বলেন তিনি। ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদে প্রায় ২২ মিনিট বক্তব্য রাখেন বিএনপির এ সংসদ সদস্য। এ সময় সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রুমিন বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, নির্বাচন অত্যন্ত সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়েছে। কিন্তু এ নির্বাচন নিয়ে সিইসিসহ বিদেশি পর্যবেক্ষক, সুজন, টিআইবি, আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দল, এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল তীব্র সমালোচনা করেছে। সেই নির্বাচনের ন্যূনতম গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে কেউ মনে করে না। এ নির্বাচন বিশ্বে এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন নির্বাচনে জয়ের জন্য নানান কায়দায় দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে নিরঙ্কুশ বিজয় বিশ্বের বুকে এই প্রথম।’
তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আগামীবার রাষ্ট্রপতির ভাষণেও একই রকম বক্তব্য দেবেন। কারণ মানুষ নিজেদের কথা বিশ্বাস করে না, কিন্তু অন্যদেরকে বিশ্বাস করাতে চায়। এ জন্য এ কথাটি মানুষ বারবার বলে। বর্তমান সরকার জনগণের ম্যান্ডেটহীন সরকার। তাই নিজেদের টিকিয়ে রাখার জন্য দেশের চরম অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে বলে জোর প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রপতি এমন এক সময় উন্নয়নের দাবি করলেন, যখন দেশের অর্থনীতি সকল সূচকে নিম্নমুখী। অর্থনীতি প্রচণ্ড বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের অর্থনীতিবিদরা অর্থনীতির মন্দাভাব নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির বক্তব্যে সেটা নেই। এ বছরে গত বছরের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে। এর মূল কারণ, পোশাক খাতের রফতানি আয় হ্রাস পাওয়া। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানে। দেশের লেনদেনের ভারসাম্য গত বছরের তুলনায় কমেছে। এর ফলে দেশের রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে কমেছে।’
রুমিন ফারহানা বলেন, ‘দেশের এসব সমস্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে বাক স্বাধীনতার সমস্যা। হামলা, হুমকি ও বিজ্ঞাপন দাতাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে গণমাধ্যমের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত আইন ও সালিশ কেন্দ্রের প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত বছর ১৪২ জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিকল্প মাধ্যম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিপীড়নমূলক নির্যাতন চলছে ডিজিটাল আইনের নামে।’
বিএনপির এ সংসদ সদস্য বলেন, ‘কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে কীভাবে তারা ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। সরকারি পাটকলগুলো ক্রমাগত লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, বেসরকারি পাটকলগুলো লাভ করছে। সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্যই আজ এই পরিস্থিতি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠাতে পারিনি। এনআরসি নিয়ে বলছি, এটি ভারতের আভ্যন্তরীণ বিষয়। অথচ এখন পর্যন্ত ভারত সরকারের সঙ্গে এনআরসির বিষয়ে কোনো সমাধানেই আসতে পারেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র বিরোধীদল হওয়ার কারণে দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের প্রধানকে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জেলে রেখে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এক লাখ মামলা দিয়েছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ভয়ের সৃষ্টি করা হয়েছে। জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা সংগ্রামকে ব্যবহার করে সুপরিকল্পিতভাবে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করে সর্বত্র ভীতির সংস্কৃতি চালু করে ভিন্ন মতকে দমন করে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। তাই রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান জাতির কাছে কোনো অর্থ বহন করে না।’