মোঃ ইশতিয়াক হোসেন (জিপু):
ব্লাসফেমেন একটি গ্রীক শব্দ ব্লাসফেমেন থেকে ব্লাসফেমি শব্দের উৎপত্তি। ধর্ম অবমাননা বা ধর্মনিন্দা বা ব্লাসফেমি হল সৃষ্টি কর্তা, পবিত্র জিনিস, কিংবা পবিত্র বা অলঙ্ঘনীয় বিবেচিত এমন কোন কিছুর প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করা, ঠাট্টা করা বা অশালীন ভাষায় আক্রমণ করা। সহজ ভাবে বলতে গেলে কারো ওপর অপবাদ বা কলঙ্ক আরোপ করা বা কারো সম্মানে আঘাত করাই ব্লাসফেমি। ব্লাসফেমি বলতে মূলত ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অসম্মান করাকেই বোঝায়। যে ব্যক্তি এসব অপরাধ করবে সে বিদ্যমান আইনে বিচারের মুখোমুখি হবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান আইনটি ব্লাসফেমি আইন হবে।
বর্তমানে আফগানিস্তান, অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, সোমালিয়া, মালয়েশিয়াতে সহ অনেক দেশে ব্লাসফেমি আইন চালু রয়েছে। প্রায় ৪০ দেশে ব্লাসফেমি আইন বিদ্যমান। কিছুদিন আগে অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশী সিফাত উল্লাহ সেফু এই অপরাধ করে কারাগারে গিয়েছেন। বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীরও বিচার চলছে। এছাড়া ‘ব্লাসফেমির’ অপরাধে বিচার হয়েছিলো সর্বশেষ আমাদের দেশে ২০০৭ সালে। ধর্মীয় উস্কানিমূলক কার্টুন প্রকাশের দায়ে কার্টুনিস্ট আরিফুর রহমানকে দুই মাসের জেল এবং ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।
অনেকে মনে করেন এই আইনটা ইসলামী আইন। এটা সম্পূর্ন ভুল ধারণা। বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনের ২৯৫ক ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিকের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অসদুদ্দেশ্যে লিখিত বা মৌখিক বক্তব্য দ্বারা কিংবা দৃশ্যমান অঙ্গভঙ্গি দ্বারা সংশ্লিষ্ট ধর্মটিকে বা কারো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা করে বা অবমাননার চেষ্টা করে, সে ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তিকে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যেতে পারে।
এছাড়াও দণ্ডবিধির ১৫৩ ক ধারায় বলা হয়েছে বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্যে কোন উচ্চারিত বা লিখিত কথা দ্বারা শত্রুতা মনোভাব বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করলে দুই বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৮ (১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উস্কানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।
(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
সর্বোপরি বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে আপনাকে অনেক সতর্ক থাকতে হবে, কোন কিছু বলতে কিংবা লিখতে গেলে ভেবেচিন্তে করতে হবে। আপনার হাতে যে সাইটগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে সেগুলো ভালো ভাবে সুরক্ষিত রাখতে হবে অন্যথায় আপনার শত্রু থাকলে তা ভিন্ন খাতে কাজে লাগাতে ও পারে।
লেখক: আইনজীবী; জজকোর্ট, ঢাকা।