শুভ্র সিনহা রায়: সরকারি-বেসরকারি পরীক্ষায় নকল একটি মারাত্মক অপরাধ। অনেক পরীক্ষার্থী বুঝে ও না বুঝে এই অপরাধ করছে। অসৎ পরীক্ষার্থীদের নকল করার ফলে বঞ্চিত হয় যোগ্য প্রার্থীরা, প্রতিষ্ঠান পায় না যোগ্য প্রার্থী। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-১৯৮০ অনুযায়ী, পরীক্ষার হলে নকলের সুনির্দিষ্ট শাস্তি রয়েছে। কী সেই শাস্তি—এই নিয়ে এবারের আলোচনা।
পাবলিক পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়দানের শাস্তি : পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-এর ৩ ধারা অনুযায়ী, কেউ অসদুপায় অবলম্বন করে নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করে বা পরীক্ষার্থী বলে ভান করে পাবলিক পরীক্ষার সময় হলে প্রবেশ করলে অথবা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন এক বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
পাবলিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে প্রশ্নপত্রের প্রকাশনা বা বিতরণ : যিনি বা যাঁরা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ কিংবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল আছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে লিখিত কোনো প্রশ্ন সংবলিত কাগজ যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ করেন, তিনি বা তাঁরা পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ডে ও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
ভুয়া মার্কশিট, সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা অথবা ডিগ্রি তৈরি করা : পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ৬ ধারা অনুযায়ী, ‘যিনি বা যাঁরা কোনো পাবলিক পরীক্ষার মার্কশিট, সার্টিফিকেট, ডিপ্লোমা অথবা ডিগ্রি যা মিথ্যা বলে জানেন অথবা তা কোনো কর্তৃত্বসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ড কর্তৃক জারীকৃত হয়নি বলে জ্ঞাত আছেন, কিন্তু এর পরও তা তৈরি করেন, ছাপান, বিতরণ করেন, ব্যবহার করেন অথবা আইনসম্মত অজুহাত ছাড়াই নিজের দখলে রাখেন, তিনি বা তাঁরা সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র পরিবর্তন : ওই আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী, ‘যিনি বা যাঁরা কোনো পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত উত্তরপত্র অথবা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য একটি উত্তরপত্র বা এর অংশ প্রতিস্থাপন করেন, অথবা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি এরূপ উত্তরসংবলিত অতিরিক্ত পৃষ্ঠা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে সংযোজিত করেন, তিনি বা তাঁরা সর্বোচ্চ ১০ বছর, সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
মৌখিক বা লিখিতভাবে তথ্য সরবরাহ : আইনে বলা আছে, ‘যিনি বা যাঁরা কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর অথবা কোনো বই বা লিখিত কাগজ অথবা তার কোনো পৃষ্ঠা কিংবা কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করেন অথবা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক উপায়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য বলে দিয়ে সহায়তা করেন, তিনি বা তাঁরা ধারা ৯ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ পাঁচ বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
অবৈধ উপায়ে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করা : পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী, ‘যিনি বা যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হয়েও কোনো পাবলিক পরীক্ষার হলে কোনো পরীক্ষা পরিচালনা করেন, অথবা কোনো পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত উত্তরপত্র পরীক্ষা করেন, অথবা যিনি অন্য ব্যক্তির পরিচয়ে কিংবা কল্পিত নামে পরীক্ষার হলে পাবলিক পরীক্ষা পরিচালনা করেন, অথবা পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষা করেন, তিনি বা তাঁরা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, সর্বনিম্ন দুই বছর কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
দায়িত্ব পালনে বাধাদান বা গোলযোগ সৃষ্টি : ‘যিনি বা যাঁরা কোনো পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে কাউকে বাধা প্রদান করেন অথবা পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠানে বাধা প্রদান করেন অথবা কোনো পরীক্ষার হলে গোলযোগ সৃষ্টি করেন, তিনি বা তাঁরা এক বছরের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও অপরাধ করা : ‘যিনি বা যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় বা বোর্ডের কোনো অফিসার কিংবা কর্মচারী হয়েও অথবা পাবলিক পরীক্ষাসংক্রান্ত কোনো কর্তব্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ করেন, তিনি বা তাঁরা ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’
লেখক : আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট