করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে লকডাউন পরিস্থিতিতে শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির ঘটনায় শিশুর সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার আহবান করেছেন ‘শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন’।
১৩ মে বুধবার ‘শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন’ সচিবালয়ের পক্ষে ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট’ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে করোনা মহামারীর সময়ে দেশে শিশুদের প্রতি সংঘটিত সকল প্রকার সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, প্রচার মাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ হতে জানা যায় যে, করোনা সংক্রমণ এর লকডাউন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবারে, ঘরের বাইরে, কোচিং সেন্টারে অভিভাবক, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, গৃহকর্তী/গৃহকর্তা, গৃহ শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের দ্বারা শিশুরা বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এমনকি ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। কোয়ালিশনের সদস্য, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর তথ্য অনুযায়ী বিগত মার্চ ও এপ্রিল মাসে দেশে ১৫৪ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে মার্চ মাসে নির্যাতিত হয়েছেন ৭৫ জন এবং এপ্রিল মাসে নির্যাতিত হয়েছেন ৭৯ জন। অন্যদিকে, উক্ত দুই মাসে মোট ৯০ জন শিশু হত্যাকান্ডের শিকার হয়, যার মধ্যে মার্চ মাসে ৫৫ জন এবং এপ্রিল মাসে ৩৫ জন।
শিশুদের প্রতি উল্লেখিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, ধর্ষন, গুরুতর আঘাত করা ও হত্যার ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ও যথাযথ শাস্তি প্রদানের দাবী জানিয়েছেন কোয়ালিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে ‘শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসন কোয়ালিশন’ কিছু দাবী ও সুপারিশ তুলে ধরেছেন, তা হল-
- শিশুর প্রতি নির্যাতনের ঘটনায় সকল অভিযুক্তকে দ্রæততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা এবং দোষী ব্যাক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা;
- নির্যাতিত শিশুর পরিবারকে যথাযথ সুরক্ষা প্রদান এবং নির্যাতনের শিকার শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা;
- শিশু সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে সার্বক্ষণিক সরকারী ও বেসরকারী হেল্পলাইন/হটলাইন নম্বর খোলা রাখা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন;
- শিশুর অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো;
- শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে বিশেষজ্ঞ পরামর্শ অনুযায়ী সরকারী – বেসরকারী সেবা প্রদান কর্মসূচি গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে।
- শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালানো;
- করোনা মহামারীর সময়ে শিশুদের প্রতি অধিক যতœবান হওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন করা;
- করোনা ভাইরাসের সংক্রমন রক্ষায় শিশুদের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিষয়ে বয়স উপযোগী তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সচেতন করার বিষয়ে সরকারী ও বেসরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহন;
- কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী শিশু সুরক্ষা কাঠামো তৈরি ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিতকরণের জন্য জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো;
- অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিশু এবং তার পরিবারের সদস্যদের সামাজিক সুরক্ষা সেবায় অন্তর্ভূক্তিকরণ নিশ্চিত করা;
- শিশু সুরক্ষা ও শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে প্রচলিত হটলাইনে সেবা প্রদান নিশ্চিত করা;
- তথ্য প্রযুক্তি ও টেলিকম সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে অনলাইনে শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে, গ্রাহকদের কাছে অনলাইনে শিশু সুরক্ষা সম্পর্কিত ক্ষুদে বার্তা প্রেরণের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা ইত্যাদি।