সাধারণ ডায়েরি (জিডি)

জিডি সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা

আবু রাসেল মিয়া :

জিডি বা সাধারণ ডায়েরী আমাদের প্রত্যহিক জীবনে বহুল শ্রুত একটি শব্দ কিন্তু থানায় গিয়ে কীভাবে জিডি করতে হয়, তা অনেকেই জানেন না। আসুন জেনে নেয়া যাক জিডির আদ্যোপান্ত।

জিডি কি?

জিডি হলো সাধারণ ডায়েরি (জেনারেল ডায়েরি) বা কোনো বিষয়ে সাধারণ বিবরণ। এই আইনি সহায়তা পেতে একটি বিবরণ লিখিতভাবে থানায় জমা দিতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক যেকোনো ব্যক্তি থানায় এটি করতে পারবেন।

জিডি কেন করবেন?

বিভিন্ন কারণে জিডি করা হয়। যেমন –

  • কেউ ভয় বা হুমকি দিলে,
  • নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে থানায় জিডি করা হয়ে থাকে।
  • শুধু তা-ই নয়, কোনো ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলে জিডি করা যায়।

এসবের বাইরেও কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন

  • পরিচয়পত্র
  • পাসপোর্ট
  • চেকবই
  • লাইসেন্স
  • শিক্ষাসংক্রান্ত সনদ
  • দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলেও জিডি করা যায়।
  • এ ছাড়া কেউ কারও সম্পদের ক্ষতি করলে
  • প্রাণনাশের হুমকি দিলে
  • বাসার কেউ হারিয়ে বা পালিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে জিডি করা জরুরি।

কেননা, সন্দেহভাজন কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় বা হারানো কিছুর জন্য জিডি করা হলে ওই ঘটনা ঘটার পর দোষী ব্যক্তিকে শনাক্তকরণে বা হারানো জিনিস খুঁজে পেতে এবং আইনি সহায়তা নিতে জিডির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

জিডি কিভাবে ও কোথায় করবেন?

জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকার থানাতেই জিডি করা উচিত। নিজের এলাকার থানাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

এবার আসুন জেনে নেই জিডিতে কী কী উল্লেখ করতে হবে:

১. থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সম্বোধন করে লিখতে হবে এবং থানার নাম ও ঠিকানা লিখতে হবে।

২. বিষয় : ‘জিডি করার জন্য আবেদন’- এভাবে লিখতে হবে।

৩. অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা করলে জিডিতে আশঙ্কার কারণ উল্লেখ করতে হবে।

৪. হুমকি দিলে হুমকি দেওয়ার স্থান, তারিখ, সময়, সাক্ষী থাকলে তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।

৫. হুমকি প্রদানকারী পরিচিত হলে তার/তাদের নাম, পিতার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।

৬. অপরিচিত হলে তাদের শনাক্তকরণের বর্ণনা দিতে হবে।

৭. জিডি নথিভুক্ত করে বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করতে হবে।

৮. সর্বশেষ জিডিকারীর নাম, স্বাক্ষর, পিতার নাম, পূর্ণ ঠিকানা ও তারিখ লিখতে হবে।

উল্লেখ্য, জিডি দুই কপি করতে হবে।

এক কপি নথিভুক্ত করার জন্য থানায় জমা দিতে হবে, আরেক কপি থানার কর্মকর্তার সিল এবং জিডির নম্বর সংবলিত কপিটি যত্ন করে সংরক্ষণ করতে হবে।

অনলাইনে জিডি করার পদ্ধতি –

আপনার যদি তাৎক্ষণিক পুলিশকে প্রয়োজন না হয় বা আপনার যদি থানায় যেতে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকে তাহলে অনলাইনেও জিডি করতে পারবেন। দেশের বাইরে থেকেও জিডি করা সম্ভব। অনলাইনে জিডি করতে ভিজিট করবেন gd.police.gov.bd সাইটে।

কখন জিডি করবেন না?

যেকোন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ যেমন – চুরি,  ছিনতাই, মারামারি, অপহরণ, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ইত্যাদি অপরাধের বিরুদ্ধে জিডি হয়না, এমন অবস্থায় থানায় এফআইআর বা কোর্টে মামলা করতে হয়।

জিডি করতে কত টাকা লাগে?

জনশ্রুতি আছে থানায় গেলে টাকা ছাড়া নাকি জিডি করা যায় না। ছবিতে দেয়া ফরমেট অনুযায়ী জিডি লিখে থানায় যান। কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন হবেনা। মনে রাখবেন যেকোন সরকারী সেবার জন্য কোন অর্থের প্রয়োজন হয়না। সরকারী সেবা পাওয়া আপনার অধিকার। সুতরাং নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সাহায্য করুন। এত কিছুর পরও যদি কেউ অর্থ দাবি করে তাহলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বা জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’কে বিষয়টি অবহিত করুন।

জিডির একটি নমুনা কপি

তারিখ………..

বরাবর

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা

……..থানা,  জেলা – ময়মনসিংহ।

বিষয়ঃ সাধারণ ডায়েরি অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন।

জনাব,

আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, নাম………, বয়স……, পিতা/স্বামী………, ঠিকানা……….।  এই মর্মে জানাচ্ছি যে, গত……  তারিখ…….  সময়……….  জায়গায় আমার নিম্ন লিখিত কাগজ / ডকুমেন্টস / মালামাল হারিয়ে গেছে। বর্ণনাঃ ( যা হারিয়েছে এবং যেভাবে হারিয়েছে তার বিবরণ ) এমতাবস্থায় আমি আমার (……) এর অবৈধ ব্যবহার রোধকল্পে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জনাবের নিকট বিষয়টি সাধারণ ডায়েরি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানাচ্ছি।

বিনীত,

নাম……..

ঠিকানা…….

মোবাইল নম্বর……

আবু রাসেল মিয়া : অ্যাডভোকেট, জজ কোর্ট, ময়মনসিংহ।