চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগী ফেরত পাঠানোর কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা না দিয়ে রোগী ফেরত পাঠানোর অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক মো. আমিনুল হাসানের স্বাক্ষরে হাইকোর্টকে দেয়া এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ১১ জুন দেশের সকল সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসমূহে কোভিড ও ননকোভিড রোগীর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয়। তাছাড়া অধিদফতরের হাসপাতাল শাখা থেকে ১৮ জুন দেশের সকল হাসপাতাল ক্লিনিকসমূহকে নির্ধারিত ফি’র (ইউজার ফি) বিনিময়ে (কোভিড-১৯) রোগীর চিকিৎসা অব্যাহত রাখার জন্য এবং ২৯ জুন সকল বেসরকারি হাসপাতালসমূহে সকল ধরনের রোগীদের (কোভিড/নকোভিড এরিয়া চিহ্নিত/বিভাজন পূর্বক) সকল ধরনের চিকিৎসা প্রদানের অনুমোদন প্রাপ্ত ওআরটি পিসিআরের সুবিধা সম্বলিত যে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে নিদিষ্ট ফি’র বিনিময়ে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এসব নির্দেশ পালনে অপারগতা প্রকাশকারী/ ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাদের রেজিস্ট্রেশন স্থগিত/ বাতিলের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে স্মারকে উল্লেখ করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি তাই কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে এ ধরনের বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৫০ বা তার অধিক শয্যার বেসরকারি হাসপাতালে (যেমন-স্কয়ার, এভার কেয়ার, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল ইত্যাদি) নির্দেশনা মেনে কোভিড-১৯ ও নন কোভিড রোগীদের পৃথকভাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল বেঞ্চে এই প্রতিবেদন মঙ্গলবার (৩০ জুন) দাখিল করা হয়। এই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেছিলেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। তবে রিটকারী আইনজীবীরা এ বিষয়ের ওপর প্রতিবেদন ওইদিন না পাওয়ায় তারা শুনানি করতে সময় নেন। তখন আদালত বিষয়টি নিয়ে আগামী ৬ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন। এসময় শুনানিতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান, অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক ফয়সাল, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও মাহফুজুর রহমান মিলন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে পৃথক তিনটি বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা বিষয়ে বলা হয়, কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ আইসিইউ-এ চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগীর কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিং-এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রি-ফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করার ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে (ভান্ডার ও সরবরাহ) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রতিবেদন আসার বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের সকল হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লক্ষ্য করছি এমন ঘটনার খবর প্রকাশ পাচ্ছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমের খবরসমূহ নির্ধারিত তারিখে পরবর্তী শুনানির দিন মহামান্য আদালতে উপস্থাপন করব।
হাইকোর্টে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি জানার পর প্রায় একই কথা বলেন রিটকারী অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামানও।
হাইকোর্টে পৃথক পৃথক ৫টি রিট আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত ১৫ জুন এক আদেশে চিকিৎসা না দিয়ে সাধারণ রোগীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন।
আদালত আদেশে অবহেলায় মৃত্যু, আইসিইউ বণ্টন, বেসরকারি হাসপাতাল অধিগ্রহণ, অক্সিজেন সরবরাহ ও ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা লকডাউন নিয়ে মোট ১১ দফা নির্দেশনা ও অভিমত দেন। এসব নির্দেশনা ও অভিমতের মধ্যে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত পরের দিন ৭টি নির্দেশনা স্থগিত করে আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত (১৬ জুন) এই স্থগিতাদেশ দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের চেম্বার জজ আদালত।
এর আগে ভিন্ন-ভিন্ন সময়ে ভার্চুয়াল হাইকোর্টে ৫টি রিট করা হয়। বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ অধিগ্রহণ ও ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ স্থাপনার নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল আল মামুন।
অন্যদিকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সাধারণ রোগীদের ফিরিয়ে দেয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন আইনজীবী এ এম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান।
এছাড়া সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে আর একটি রিট করেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন। আর করোনা চিকিৎসায় সরকারি নির্দেশনার বাইরে অতিরিক্ত অর্থ না নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করেন আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। এছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রামণের প্রেক্ষাপটে ঢাকা শহরকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা চেয়ে রিট করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল ইসলাম।