অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত খোলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বরাবর ৭ দফা প্রস্তাবনাসহ চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
আজ বুধবার (৮ জুলাই) সমিতির কার্যকরী কমিটির এক জরুরী সভা শেষে এ চিঠি দেয়া হয়েছে। পরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পুরো বিষয়টি সকলকে অবহিত করা হয়।
ভার্চ্যুয়াল আদালত নিয়মিত আদালতের বিকল্প হতে পারে না উল্লেখ করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত সাপেক্ষে অনতিবিলম্বে নিয়মিত আদালত খোলার পক্ষে মত দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সংগঠনটি।
পাশাপাশি সুপ্রীম কোর্টের বাৎসরিক ছুটিসহ দেশের সকল আদালতের ডিসেম্বরের ছুটি বাতিল, পরবর্তী বছরগুলোতে ঐচ্ছিক ছুটি কমিয়ে আনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন ও আগাম জামিন চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে।
নিয়মিত আদালত চালুর আগে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থী জনগণ এবং আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় বেশকিছু পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করে বার ও বেঞ্চের সদস্যদের সমন্বয়ে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় করণীয় ঠিক করতে সমীক্ষা পরিচালনা করা যেতে পারে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বরাবরে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ১২ মার্চ, থেকে অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত ছুটি এবং ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতসহ সারাদেশের আদালতসমূহে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ১২ মার্চ থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৩৫ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের অনেকেরই করোনা উপসর্গ ছিল। এছাড়া দেশব্যাপী অনেক বিজ্ঞ আইনজীবী করোনার কারণে মুত্যুবরণ করেছেন। অসুস্থ হয়েছেন শতাধিক আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিসহ নিম্ন আদালতের অনেক বিচারক, কর্মকর্তা-কর্মচারী আক্রান্ত হয়েছেন। নিম্ন আদালাতের বিচারকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এটি আমাদের প্রত্যেকের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
এমন পরিস্থিতিতেও ইতোমধ্যে সরকার সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, কলকারখানা, মার্কেট ও গণপরিবহন চালু হয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়মিত আদালতের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে, একদিকে যেমন আইনজীবীরা যথাযথভাবে তাদের পেশা পরিচালনা করতে পারছেন না ও আর্থিক সংকটে পতিত হচ্ছেন, অন্যদিকে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়, একথা অনস্বীকার্য যে, অনিবার্য পরিস্থিতির কারণেই ভার্চ্যুয়াল আদালতের সৃষ্টি। তবে আমাদের তথ্যানুযায়ী, অধিকাংশ আইনজীবী নানা সীমাবদ্ধতার কারণে ভার্চ্যুয়াল আদালতে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এছাড়া ভার্চ্যুয়াল আদালতে আগাম জামিনের মতো অতীব গুরুত্বপুর্ণ আইনি ব্যবস্থাপনা না থাকায় বিচারপ্রার্থী জনগণ ব্যাপক পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।