পলাতকদের বক্তব্য এবং বিচারাধীন বিষয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে একাত্তর টিভি-এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি পলাতকদের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের বিষয়ে সব পক্ষকে শুনে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে বলেও জানান উচ্চ আদালত।
আজ রোববার (১৭ জানুয়ারি) এ বিষয়ে একাত্তর টিভির লিখিত বক্তব্য উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ প্রত্যাশা করেন।
একইসঙ্গে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার হালদারের সাক্ষাৎকার ও সরাসরি বক্তব্য প্রচার নিয়ে একাত্তর টিভির বিরুদ্ধে দুদকের আনা অভিযোগও নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। একাত্তর টিভির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আশরাফ আলী।
লিখিত বক্তব্যে একাত্তর টিভি তাদের সম্প্রচার করা বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের খতিয়ান তুলে ধরে। কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া তারা সরল বিশ্বাসে (গুড ফেইথ) ওই সাক্ষাৎকার প্রচার করে। ভবিষ্যতে বিচারাধীন বিষয়ে সম্প্রচারে তারা সতর্ক থাকবেন।
এরপর আদালত একাত্তর টিভির বিরুদ্ধে দুদকের করা আদালত অবমাননার অভিযোগটি নিষ্পত্তি করে আদেশ দেন। আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, পলাতকদের বক্তব্য এবং বিচারাধীন বিষয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারে ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভি।
এদিকে পলাতকদের বিষয়ে গণমাধ্যমসহ যেকোনো মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচারের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা এ রুল নিষ্পত্তি না হওয়া কিংবা পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বহাল রেখেছেন। তবে বিশ্বের অন্য দেশে এ বিষয়ে কি ধরনের সিদ্ধান্ত আছে তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
আইনজীবী মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতের নজির তুলে ধরেন। শুনানিতে যুক্ত হয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির এ বিষয়ে অন্তত ৩৭টি সিদ্ধান্ত দেখানোর কথা বলেন। এ সিদ্ধান্তগুলো লিখিত আকারে জমা দিতে অনুমতি চান। তখন আদালত তাকে অনুমতি দেন।
এছাড়াও আদালত বলেন, আদালতের দরজা খোলা। যে কেউ আইন অনুসারে পক্ষভূক্ত হয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরতে পারবেন। সব পক্ষকে শুনে পলাতকদের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
পিকে হালদারের গ্রেফতারে বিষয়ে সুয়োমোটো রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় ২৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার সংবাদে পিকে হালদারের সাক্ষাৎকার এবং রাত সাড়ে ১১টায় একাত্তর জার্নাল তার সরাসরি বক্তব্য প্রচার করে।
২৯ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতের নজরে এনে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম বলেন, ‘একজন পলাতক আসামির সাক্ষাৎকার প্রচার করা, এছাড়া তাদের রাতের টক-শোতেও ওই আসামিকে লাইভে এনেছে। আমাকেও সংযুক্ত করেছিল। আমি তার কথা শুনে লাইভ থেকে বেরিয়ে এসেছি। কারণ আমি তো পলাতক আসামির সঙ্গে টকশো করতে পারি না। প্রথম কথা হলো, পি কে হালদার পলাতক, আর দ্বিতীয় হলো তার বিষয়ে এ আদালতে একটা সুয়োমোটো মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় তার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে কী আছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এই আদালত সেই ভিডিও সাক্ষাৎকার তলব করে দেখতে পারেন। এরপর প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন।’
আদালত এ বিষয়ে লিখিত আবেদন দিতে বলেন। পরদিন তিনি লিখিত আবেদন দিলে সাক্ষাৎকার এবং মধ্যরাতে প্রচারিত টকশোর ভিডিও ক্লিপ তলব করেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি যেকোনো পলাতক আসামির বক্তব্য গণমাধ্যমসহ সব মাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন।
সে অনুসারে ১০ জানুয়ারি একাত্তর টিভি কর্তৃপক্ষ দুটি ক্লিপ হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার বরাবর জমা দেন। পরে সেটি আদালতে প্রদর্শন করা হয়। প্রদর্শন শেষে দুদক আইনজীবী আদালত অবমাননার অভিযোগ আনেন। এরপর হাইকোর্ট আদালত অবমাননার বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে আগে একাত্তর টিভির বক্তব্য শুনতে চান।
এ আদেশ অনুসারে রোববার ১৭ জানুয়ারি একাত্তর টিভির আইনজীবী লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
২০২০ সালের ১৮ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।