ইনস্ট্যান্ট নুডলসের এই যুগে, লোকেরা তাত্ক্ষণিক বিচার প্রত্যাশা করে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা। তাৎক্ষণিক বিচার চাইলে যে ক্ষতি হতে পারে, সেটা অনেকে বুঝতে চান না বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
চেন্নাইয়ে মাদ্রাজ হাইকোর্টের নয় তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে গতকাল শনিবার (২৩ এপ্রিল) তিনি এমন মন্তব্য করেন।
প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা বলেন, ‘ভারতের মত বৈচিত্র্যময় দেশে বিচারপতিরা অন্ধভাবে নিয়ম, পদ্ধতি এবং আইন প্রয়োগ করতে পারেন না। বিচারপতিদের সামাজিক বাস্তবতার কথাও খেয়াল রাখতে হয়। দ্রুত বদলে চলা বিশ্বে সামাজিক প্রয়োজন এবং প্রত্যাশার কথা খেয়াল রাখতে হয়।
তিনি বলেন, ‘টেস্ট ম্যাচের বদলে এখন সবাই ২০-২০ ক্রিকেট দেখে। তিন ঘণ্টার সিনেমার বদলে স্বল্প সময়ের সিনেমা দেখে। তৈরি করা কফি বা নুডলসের বদলে তাৎক্ষণিক তৈরি হওয়া কফি এবং নুডলস খায়। কিন্তু, তাৎক্ষণিক বিচার চাইলে যে ক্ষতি হতে পারে, সেটা অনেকে বুঝতে চান না।’
বিচার ব্যবস্থা গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। কিন্তু, সেই বিচার ব্যবস্থা প্রভাবিত হচ্ছে। কী কী বিষয় তাকে প্রভাবিত করছে, শনিবার তা খোলসা করলেন দেশটির প্রধান বিচারপতি এনভি রমনা। তাঁর খেদ, ‘বিচার বিভাগের প্রতি জনসাধারণের আস্থা টিকিয়ে রাখা আজ এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।’ সেই সমস্যা মেটাতে ভাষাগত বাধা দূর করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘আইনের শাসন বজায় রাখা, তা নির্বাহ করা এবং আইন প্রণয়নের বাড়াবাড়ি রোধ করার জন্য বিচার বিভাগের অপরিসীম সাংবিধানিক দায়িত্ব আছে। সাংবিধানিক মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখা এবং তা প্রয়োগ করা বিচার বিভাগের কর্তব্য। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভারী বোঝা। তবে এটি এমন একবিষয়, যা বিচারপতিরা তাঁদের সাংবিধানিক শপথ নেওয়ার দিনই সানন্দে বেছে নেন। আর, সেজন্যই আইনের শাসন টিকিয়ে রাখতে বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার ওপর সর্বাগ্রে জোর দেওয়া প্রয়োজন। ন্যায়বিচার শুধুমাত্র একটি সাংবিধানিক দায়িত্ব নয়, একটি সামাজিক দায়িত্বও বটে।’
এই শনিবারই দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে এক বছর পূর্ণ করলেন এনভি রমনা। গত একবছরের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি জানান, তাঁর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়াম হাইকোর্টের বিচারকদের জন্য ১৮০টি সুপারিশ করেছে। যার মধ্যে ১২৬টি কার্যকর হয়েছে। আরও ৫৪টি কার্যকর হওয়ার পথে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম দিন থেকেই বিচার বিভাগীয় শূন্যপদ পূরণে তিনি জোর দিচ্ছেন। বর্তমানে, হাইকোর্টের বিচারপতিদের মোট ১,১০৪টি শূন্যপদের ৩৮৮টি মাত্র ফাঁকা আছে। এর মধ্যে সরকার বিভিন্ন উচ্চ আদালত থেকে প্রায় ১০০টি প্রস্তাব পেয়েছে। যা এখনও সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়নি।’